নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় - পর্ব-৩ | হযরত ইমাম গাজ্জালী (রাহঃ)


সত্যের সন্ধানে ইমাম গাজ্জালী 


নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় - পর্ব-৩ | হযরত ইমাম গাজ্জালী (রাহঃ)
নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায়



ইমাম গাজ্জালী রহঃ এর বাণী


॥ প্রবৃত্তিকে তিরস্কার করার নিদর্শন ॥ পর্ব -৩



ওহে নির্লজ্জ। ধন-দৌলত উপার্জনে প্রবৃত্ত হইয়া কত প্রকারের লাঞ্ছনা-গঞ্জনা ও কত প্রকারের দুঃখ-কষ্ট সহ্য করিয়া থাক এবং রোগের কষ্ট হইতে শান্তি পাইবার বাসনায় একজন বিধর্মী চিকিৎসকের কথায় সর্ববিধ লোভনীয় পদার্থের কামনা বর্জন করিয়া থাক, কিন্তু কোরআন পাকের স্পষ্টোক্তি এবং পয়গম্বরগণের অকুণ্ঠ ঘোষণা ও সংবাদ প্রদান হইতে এতটুকু কথা তুমি বুঝিতে পারিলে না যে, দারিদ্র্য ও রোগ-ব্যাধির যন্ত্রণা হইতে দোযখের যন্ত্রণা ও দুঃখ-কষ্ট অসংখ্য গুণে অধিকতর কষ্টদায়ক এবং পরলোকের জীবন অনন্ত ও অসীম; আর ইহলোকের জীবন অল্প দিনের ও ক্ষণস্থায়ী।


হে মন! তুমি বোধ হয় এরূপ দুরাশায় মাতিয়া রহিয়াছ যে, অতীত পাপের জন্য তওবা করিয়া হঠাৎ সৎ পথে ফিরিয়া যাইবে এবং উত্তম উত্তম সৎকার্য করিয়া অতীত পাপের ক্ষতিপূরণ করিয়া ফেলিবে। কিন্তু সেই সৌভাগ্য তোমার নাও হইতে পারে। তওবার ভাব পোষণ করিতে করিতে অকস্মাৎ একদিন মৃত্যু আসিয়া তোমার দ্বারে উপস্থিত হইবে, তখন আফসোস ও অনুতাপ ভিন্ন তোমার ভাগ্যে আর কিছুই জুটিবে না।


হে প্রবৃত্তি। তুমি যদি ধারণা করিয়া থাক যে, আজ অপেক্ষা আগামীকল্য তওবা করা তোমার পক্ষে অধিকতর সহজ হইবে, তবে তুমি মহাভুলের মধ্যে পতিত রহিয়াছ; ইহা তোমার নিতান্ত বোকামি ও মূর্খতা বৈ আর কিছুই নহে। কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত হইয়া তওবা করিতে যতই বিলম্ব বা গড়িমসি করিবে, ততই তওবা করা তোমার পক্ষে দুঃসাধ্য হইয়া উঠিবে। এতদ্ভিন্ন আর একটি কথাও মনে রাখিও, মৃত্যুর দ্বারে উপস্থিত হইলে তখন তওবা করা বৃথা। দুর্গম পর্বতে আরোহণের পূর্ব মুহূর্তে দুর্বল বাহন অশ্বকে শক্তিশালী করিয়া লওয়ার উদ্দেশ্যে উদর পুরিয়া দানা পানি খাওয়াইলে কোনই সুফল পাওয়া যায় না। দুর্গম পার্বত্য পথে চলিবার জন্য বলবান বাহন অশ্বের প্রয়োজন থাকিলে অশ্বকে অনেক পূর্ব হইতেই ঘাস ও দানা পানি খাওয়াইয়া বলবান করিয়া লইতে হয়। দুর্বল পশুকে পরিশ্রমের পূর্বক্ষণে উদর পুরিয়া খাওয়াইলে শক্তিমান হওয়ার পরিবর্তে আরো দুর্বল হইয়া পড়ে।

👇

হযরত ইমাম গাজ্জালী (রাহঃ)

 (কিমিয়ায়ে সা'আদাত)



একদিন ইবনে খায়ছাম হযরত ইবন মাসউদ (রাঃ) এর সাথে এক কর্মকারের কাছে গেলেন। তথায় গিয়ে তিনি কর্মকারের জ্বালানো আগুনের শিখা দেখে সজোরে চীৎকার দিয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়লেন । হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) নামাযের সময় হওয়া পর্যন্ত তাঁর শিয়রে বসে রইলেন কিন্তু তার হুঁশ ফিরে আসল না। অবশেষে তিনি তাঁকে পিঠে তুলে নিজ গৃহে নিয়ে এলেন। পরদিন ঠিক সেই সময় তাঁর জ্ঞান ফিরে এল, যে সময়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। ফলে পাঁচ ওয়াক্ত নামায তাঁর কাজা হয়ে গেল। যতক্ষণ তিনি বেহুঁশ ছিলেন, হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) তাঁর শিয়রে বসে বার বার বলতেছিলেন, আল্লাহর কসম, ভয় তো একেই বলা হয়।

👇

এহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন (১ম খন্ড)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url