তাওয়াক্কুলের ঘটনা | এক বুজুর্গ দরবেশের তাওয়াক্কুলের ঘটনা



তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ | একটি তাওয়াক্কুলের গল্প


তাওয়াক্কুলের ঘটনা | এক বুজুর্গ দরবেশের তাওয়াক্কুলের ঘটনা

একটি তাওয়াক্কুলের গল্প





 তাওয়াক্কুলের ঘটনা | এক বুজর্গ দরবেশের তাওয়াক্কুলের ঘটনা - হযরত ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)


পুরাতন যুগে কোন একজন দরবেশ লোকালয় ত্যাগপূর্বক কোন এক তৃণলতাবিহীন বিজন পর্বত গুহায় আল্লাহ্ তা'আলার তরফ হইতে আহার পাইবার আশায় তাঁহার প্রতি নির্ভর করিয়া বসিয়া রহিলেন। সপ্তাহকাল উক্ত গুহায় কাটাইয়া দিলেন, কিন্তু কোন স্থান হইতেই কোন খাদ্যের ব্যবস্থা হইল না। অবশেষে দরবেশ লোকটি অনাহারে মৃতবৎ হইয়া পড়িলেন। তখন আল্লাহ্ তা'আলা তৎকালীন পয়গম্বরকে ওহী দ্বারা জানাইয়া দিলেন যে, 'অমুক দরবেশকে অমুক গুহায় যাইয়া বলিয়া দাও যে, আমার ইজ্জতের কসম, সে লোকালয়ে ফিরিয়া যাইয়া জনসমাজে বাস না করা পর্যন্ত আমি তাহাকে রেযেক প্রদান করিব না। এই কঠোর ঘোষণা শ্রবণে দরবেশ লোকটি তৎক্ষণাৎ লোকালয়ে আসিয়া মানুষের সহিত বসবাস আরম্ভ করিতেই নানা স্থান হইতে বহু 'হাদ্ইয়া' আসিতে লাগিল, ইহাতে দরবেশের মনে বিষম খটকা বাধিল। আল্লাহ্ তা'আলা পয়গম্বরের মাধ্যমে ওহী দ্বারা তাহাকে জানাইয়া দিলেন যে, তুমি স্বীয় বৈরাগ্য ও তাওয়াক্কুলের দ্বারা আমার প্রতিষ্ঠিত সৃষ্টি পালনের কৌশল ওলট-পালট করিয়া দিতে চাহিয়াছিলে। তোমার এতটুকু জ্ঞান নাই যে, আমি আমার বান্দাগণকে যে রেযেক প্রদান করিয়া থাকি তাহা আমার অন্যান্য বান্দাগণের হাত দ্বারা পৌঁছাইয়া দেওয়া আমি পছন্দ করি। আমার নিজ হাতে প্রদান করা আমার পছন্দনীয় নহে। এইরূপে শহরের মধ্যে অর্থাৎ, লোকালয়ে নিজের গৃহাভ্যন্তরে লুকাইয়া দ্বার রুদ্ধ করতঃ আল্লাহ্ পাকের তরফ হইতে রেযেক পাইবার আশায় তাওয়াক্কুল করিয়া বসিয়া থাকাও 'হারাম'। ইহার কারণ এই যে, অপরিহার্য উপকরণ হইতে দূরে সরিয়া থাকা নিতান্ত অন্যায়। কিন্তু ঘরের দরওয়াজা বন্ধ না করিয়া আল্লাহ্ তা'আলার তরফ হইতে জীবিকা প্রাপ্তির আশায় তাঁহার উপর তাওয়াক্কুল করিয়া গৃহাভ্যন্তরে বসিয়া থাকা জায়েয। তাহাও এই শর্তে যে, দরজা দিয়া কেহ কিছু লইয়া ঘরে ঢুকিতেছে কি না তাহা দেখিবার জন্য উৎসুক নেত্রে বার বার সেদিকে যেন দৃষ্টি করা না হয়; বরং তাহার অন্তর মানুষের প্রতি আকৃষ্ট না হইয়া কেবল আল্লাহ্ তা'আলার সহিত লাগাইয়া এবাদত কার্যে মশগুল থাকে। তৎসঙ্গে এরূপ পূর্ণ বিশ্বাসও যেন মনে রাখে যে, আমি যখন অপরিহার্য আসবাব বা উপকরণ হইতে দূরে সরিয়া যাই নাই; বরং আল্লাহ্ তা'আলার উপরই নির্ভর করিয়াছি, তখন অবশ্যই আমি রেযেক হইতে বঞ্চিত থাকিব না। এস্থলে বুযুর্গানে দ্বীনের সেই কথার সত্যতা প্রমাণিত হইতেছে। তাঁহারা বলিয়াছেনঃ 'বান্দা যদি রেযেক হইতে দূরে পলায়ন না করে, তবে জীবিকা তাহার পশ্চাৎ ঘুরিয়া তাহাকে অন্বেষণ করিবে।' কেহ যদি আল্লাহর সমীপে এরূপ প্রার্থনা করে যে, হে আল্লাহ্! আমাকে রেয়েক দিও না। তখন আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ ‘রে নির্বোধ! আমি কি তোকে রেযেক না দিবার জন্য সৃষ্টি করিয়াছি? তাহা কখনই হইবে না—আমি তোকে রেযেক দিবই।' যাহা হউক, প্রকৃত তাওয়াক্কুলের পরিচয় এই যে, মানুষ যেন কার্য সম্পাদনের অপরিহার্য আসবাব ও উপকরণ হইতে পলায়ন না করে কিংবা আসবার অবলম্বন করিয়া কেবল উহাকে রেযেকপ্রাপ্তির কারণ মনে না করে; বরং আসবাব সৃষ্টিকারী একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলাকেই রেযেকদাতা বলিয়া দৃঢ় বিশ্বাস রাখে এবং সমস্ত বান্দা, এমনকি সমস্ত সৃষ্টজীব তাহারই প্রদত্ত রেযেক খাইয়া জীবনধারণ করিতেছে, যদিও তন্মধ্যে কেহ কেহ লাঞ্ছনা ও অপমান সহ্য করতঃ ভিক্ষা করিয়া খাইতেছে, কেহ বা দেহপাত পরিশ্রম ও কষ্ট সহ্য করতঃ দোকানদারী ও ব্যবসা করিয়া খাইতেছে, আবার একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলার উপর নির্ভরশীল দরবেশগণ নিজ নিজ খানকায় বসিয়া ইজ্জতের সহিত আল্লাহ্ প্রদত্ত রেযেক খাইতেছেন। তাঁহারা সকলেই আল্লাহ্ তা'আলার অনুগ্রহের প্রতি উৎসুক নয়নে তাকাইয়া রহিয়াছেন, যাহা কিছু তাঁহাদের নিকট উপস্থিত হয় সব কিছুই আল্লাহ্ তা'আলার তরফ হইতে আসিতেছে দেখিতে পান এবং মধ্যস্থলে কোন মানুষের বা কোন সৃষ্ট পদার্থের হাত আছে বলিয়া মনে করেন না।

👇

হযরত ইমাম গাজ্জালী (রাহঃ)

(কিমিয়ায়ে সা'আদাত)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url