অলৌকিক ঘটনা | বুজুর্গদের অলৌকিক ঘটনা সমূহ

 


অলৌকিক ঘটনা | বুজুর্গদের অলৌকিক ঘটনা সমূহ - হযরত ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)


খোদায়ী জ্ঞানোদয়ের বাস্তব দৃষ্টান্ত।


 (১) হযরত আবুবকর (রাঃ) স্বীয় মৃত্যুর পূর্বক্ষণে কন্যা হযরত আয়েশা (রাঃ)কে বলেছিলেন, হে আয়েশা! তারা উভয় তোমার ভ্রাতা ও ভগ্নি। একথা বলার সময় তাঁর স্ত্রী গর্ভবতী ছিল এবং সে তারপর একটি কন্যা সন্তান প্রসব করল। তাঁর জন্মগ্রণের পূর্বেই হযরত আবুবকর (রাঃ) জানতে পেরেছিলেন যে, তার কন্যা হবে।


ইসলামিক অলৌকিক ঘটনা | সাহাবীদের ঘটনা


অলৌকিক ঘটনা | বুজুর্গদের অলৌকিক ঘটনা সমূহ
অলৌকিক ঘটনা





(২) আর এক সময় হযরত ওমর (রাঃ) তাঁর খুৎবাহ পাঠকালে হঠাৎ বলে উঠলেন, হে সৈন্যদল! পর্বতের দিকে এ সময় সুদূর এলাকায় মুসলমান সৈন্যদের শত্রুদলের সাথে যুদ্ধ চলছিল এবং শত্রুপক্ষ অতর্কিতে একটি পাহাড়ের দিক থেকে মুসলমান সৈন্যদের উপর আক্রমণোদ্যত হয়েছিল। হযরত ওমর (রাঃ) মদীনায় খুৎবাহ পাঠ কালে কাশফ যোগে তা জানতে পেরে এভাবে ঐরূপ বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন। তাঁর এই আহ্বান বাক্য মুসলমান সৈন্যদের নিকট পৌঁছে যাওয়াও একটি বড়ই আশ্চর্যজনক ব্যাপার ছিল।

(৩) হযরত আনাস (রাঃ) বলেছেন, আমি একদা হযরত ওসমান (রাঃ) এর সঙ্গে সাক্ষাত করবার জন্য রওয়ানা হলে পথিমধ্যে জনৈক মহিলার সাথে আমার সাক্ষাত হল। তার দিকে দৃষ্টিপাত করে তার অপূর্ব রূপ সাবণ্যের বিষয় আমি চিন্তা করতে লাগলাম। অতঃপর আমি হযরত ওসমান (রাঃ) এর নিকট পৌঁছলে তিনি বললেন, তোমাদের কোন এক ব্যক্তি আমার নিকট তার চোখের মধ্যে প্রকাশ্য ব্যভিচারের চিহ্ন নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। তুমি কি জাননা যে বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করাই ব্যভিচার? তুমি তাওবাহ কর, নতুবা তোমাকে শাস্তি দিতে হবে। আমি তাঁর কথা শুনে বললাম, হুযুরে পাক ﷺ এর পরেও কি অহী অবতীর্ণ হয়? হযরত ওসমান (রাঃ) বললেন, অহী অবতীর্ণ হয় না তবে অন্তর্দৃষ্টি, প্রমাণ এবং সত্য ফিরাসাত বা সূক্ষ্ম দৃষ্টি দ্বারা সব কিছু জানা যায়।


(৪) হযরত আবু সাইদ খাররাজ (রহঃ) বলেছেন, আমি কা'বা শরীফের মধ্যে প্রবেশ করে ছিন্ন বস্ত্র  পরিহিত একজন ফকিরকে দেখতে পেয়ে মনে মনে ভাবলাম, এরূপ দরিদ্রগণই মানব সমাজের উপর বোঝাস্বরূপ। লোকটি আমাকে ডেকে বলল, তোমার মনের মধ্যে কি আছে তা' আল্লাহতায়ালাই ভাল জানেন। তবে তুমি সে বিষয়ে সতর্ক হও। তার কথা শুনে আমি মনে মনে ক্ষমা প্রার্থনা করলাম। লোকটি আমাকে বলল আল্লাহ্ তায়ালাই বান্দার তাওবাহ কবুল করেন। অতঃপর সে আমার নিকট থেকে অন্তর্হিত হয়ে গেল। তাকে আর দেখা গেল না।


(৫) হযরত যাকারিয়া বিন দাউদ (রহঃ) বলেছেন, একদা হযরত আবুল আব্বাস বিন খছরুফ হযরত আবু ফজল হাশেমীর নিকট গেলেন। তিনি তখন অসুস্থ ছিলেন। তাঁর পরিবারে বহু লোক ছিল। তাঁর জীবিকা নির্বাহের কোন উপায় ছিল না। আমি তাঁর গৃহে উপস্থিত হয়ে ভাবতে লাগলাম এবং মনে মনে বলতে লাগলাম, হে মাবুদ! এ ব্যক্তি কোথা হতে আহার্য যোগাড় করে? তখন আবুল ফজল আমার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলেন, হে আবুল আব্বাস! তুমি ঐ হীন ভাবনা দূর কর। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা অতি সূক্ষ্ম ও গুপ্ত।


(৬) হযরত আহমদ নকীব বলেছেন, আমি একদা হযরত শিবলীর নিকট গেলে তিনি বললেন, হে আহমদ। আমাদের সবাইকেই পরীক্ষা করা হয়েছে। আমি বললাম, কি ব্যাপার? হযরত শিবলী বললেন, একদা আমি বসে আছি, হঠাৎ আমার মনের মধ্যে এরূপ ধারণা হল যে, আপনি কৃপণ লোক। আহমদ নকীব বলল, আমি কৃপণ নই। তারপর হযরত শিবলী চিন্তা করে বললেন, নিশ্চয় আপনি কৃপণ। আমি মনে মনে ইচ্ছে করলাম আজ আমি যাই পাই না কেন তা' ঐ দরিদ্র ব্যক্তিকে দান করব, যে আমার সাথে সর্বপ্রথম সাক্ষাত করে। যখন আমি এরূপ ভাবছিলাম, তখন এক ব্যক্তি আমার নিকট অনেকগুলো দিনার নিয়ে এসে বলল, এই অর্থ আপনার কোন কল্যাণকর কাজে ব্যয় করবেন। তখন আমি তা' নিয়ে বের হতেই এক অন্ধ ফকিরের সাথে সাক্ষাত হল, তার সামনে একজন ক্ষৌরকার তার কেশ মুন্ডন করছিল। তার নিকট অগ্রসর হয়ে ঐ দিনারগুলো তাকে দান করলাম। সে বলল, এগুলো ক্ষৌরকারকে দান করুন। আমি বললাম, এখানে এই পরিমাণ দিনার আছে। তিনি বললেন, আমি কি আপনাকে বলি নি আপনি কৃপণ? সে বলল, আমি তারপর দিনারগুলো ক্ষৌরকারকে দিলাম। ক্ষৌরকার বলল, যখন এই দরিদ্র লোকটি আমার সামনে ক্ষৌর কাজের জন্য বসেছে, আমি তার নিকট থেকে কোন মজুরী নেব না। তিনি বললেন, তারপর আমি সে দিনারগুলো দজলা নদীতে ফেলে দিলাম এবং সেগুলোকে সম্বোধন করে বললাম, তোমাদেরকে যে সম্মান করে তাকে মহান আল্লাহ হেয় ও অসম্মানিত করেন।


(৭) হযরত হামযাহ বিন আবদুল্লাহ আলাভী বলেছেন, আমি একদা আবুল খায়ের তাইনানীর নিকট গিয়েছিলাম। আমি মনে মনে এই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে, তাকে সালাম দেব; কিন্তু তার গৃহে কোন খাদ্য খাব না। আমি তথায় উপস্থিত হওয়ামাত্র আমার জন্য একপাত্র খানা হাজির করা হল। তিনি আমাকে বললেন, হে যুবক! এই মুহূর্তে তুমি তোমার ওয়াদা থেকে মুক্ত হয়েছ, খাদ্য গ্রহণ কর। এ আমার গৃহ নয়। আবুল খায়ের। তাইনানী এরূপ কেরামতের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন।


(৮) হযরত ইব্রাহীম রাকফী বলেছেন, একদা আমি হযরত তাইনানীর নিকট সাক্ষাত করতে গিয়েছিলাম। তখন মাগরিবের নামাযের সময় ছিল। তিনি নামাযের ইমাম হলেন; কিন্তু উত্তমরূপে সূরা ফাতেহা পড়তে পারলেন না। আমি মনে মনে ভাবলাম আমার এ সফর বৃথা গেল। তিনি সালাম ফিরাবার পর আমি প্রস্রাব করবার জন্য বাইরে গেলাম। অমনি কোথা থেকে একটা ব্যাঘ্র এসে আমার প্রতি আক্রমণোদ্যত হল। আমি তৎক্ষণাত তাইনানীর নিকট দৌড়ে এসে বললাম, একটি ব্যাঘ্র আমাকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়েছিল। তিনি বের হয়ে উচ্চৈঃস্বরে ব্যাঘ্রকে বললেন, আমি কি তোমাকে বলি নি যে, তুমি আমার কোন মেহমানের সম্মুখীন হয়ো না ব্যাঘ্রটি তখন একদিকে চলে গেল। তারপর আমি প্রস্রাব করে তাইনানীর নিকট ফিরে আসলাম। তিনি আমাকে বললেন, তুমি তোমার বাহ্যিক ব্যাপারকে ঠিক করেছ এবং ব্যাঘ্রকে ভয় করছ; কিন্তু আমরা আমাদের গুপ্ত বিষয়কে ঠিক করেছি এবং ব্যাঘ্র আমাদেরকে ভয় করে চলছে।



মানুষের মনের মধ্যে যে চিন্তার উদয় হয়, বুযর্গ লোকগণ তা' বলতে পারতেন, তার এরূপ বহু প্রমাণ রয়েছে। তাদের নিকট হযরত খিযির (আঃ) এর আগমন এবং তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাত ও অদৃশ্য থেকে তার কথা শ্রবণ ইত্যাদির বহু ঘটনা রয়েছে। তা ছাড়া বুযর্গদের অন্যান্য অসংখ্য অলৌকিক কার্যকলাপের ঘটনাও আমরা বিশ্বস্তসূত্রে জানতে পেরেছি। যে ব্যক্তি তা অস্বীকার করে তার জন্য এসব অলৌকিক ঘটনা কোন উপকারে আসে না, যে পর্যন্ত না সে নিজে প্রত্যক্ষভাবে এরূপ ঘটনা স্বচক্ষে দেখে। যে ব্যক্তি মূল ব্যাপার অস্বীকার করে সে তার বিশদ ব্যাখ্যাও অস্বীকার করে।

👇

হযরত ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)

(এহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন)


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url