সত্য ঘটনা | ইসলামিক সত্য ঘটনা
জালেম শাসকের সামনে সত্য কথা বলার সত্য কাহিনী
👇
ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেন, আমার কনিষ্ঠ চাচা মুহাম্মদ ইবনে আলী (রহঃ) বলেছেন, একদা আমি খলীফা আবু জাফর মানছুরের দরবারে উপস্থিত ছিলাম, সেখানে তখন ইবনে আবি যীব এবং মদীনার গভর্ণর হাসান ইবনে যায়েদও উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় গীফার গোত্রের কিছুসংখ্যক লোক তথায় আগমন করল। তারা খলীফার নিকট হাসান ইবনে যায়েদের বিরুদ্ধে কতিপয় অভিযোগ উত্থাপন করলে হাসান বললেন, আমীরুল মু'মিনীন! এদের বিষয় ইবনে আবি যীবের নিকট জিজ্ঞেস করুন যে, এরা কেমন লোক? খলীফা জিজ্ঞেস করলে ইবনে আবি যীব বললেন, এরা মানুষের সম্মান নষ্ট করে এবং মানুষকে খুব বেশী কষ্ট দেয়।
তখন খলীফা তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা শুনলে ত ইবনে আবি যীব তোমাদের সম্পর্কে কি বলল? তখন গীফার গোত্রের লোকগণ বলল, আপনি তার নিকট গভর্ণর হাসান ইবনে যায়েদের কথাও জিজ্ঞেস করুন। এবার খলীফা তার গভর্ণর হাসান ইবনে যায়েদের কথাও ইবনে আবি যীবের নিকট জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, আমি জানি যে, তিনি মানুষকে অন্যায় আদেশ দেন এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন। তখন খলীফা বললেন, হাসান। তুমি শুনলে ত তোমার সম্বন্ধে কি বলা হল? ইবনে আবি যীব সরল এবং সাধু প্রকৃতির লোক ছিলেন, হাসান বললেন আমীরুল মু'মিনীন; এবার আপনি তার নিকট আপনার নিজের অবস্থা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করুন।
খলীফা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আমার সম্পর্কে কি মত পোষণ করেন? এবার তিনি বললেন, আমীরুল মুমনিনীন! আপনি এ ব্যাপারে আমাকে ক্ষমা করুন; কিন্তু খলীফা নাছোরবান্দা ছিলেন; সুতরাং তিনি বললেন, আপনাকে আল্লাহর কসম দিচ্ছি, এ বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই বলতে হবে। এবার তিনি বললেন, আপনি আল্লাহর কসম দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন যেন আপনি নিজের সম্পর্কে কিছুই জানেন না; কিন্তু খলীফা তারপরও তাকে পীড়াপীড়ি করলে তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আপনার এই ধন-সম্পদ এমন লোকজনদের জন্য ব্যয় করে চলেছেন যারা এর মোটেই যোগ্য নয়। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, জুলুম, অত্যাচার ও অবিচার আপনার দ্বারা বিস্তৃতি লাভ করছে। তার কথা শুনে খলীফা মানছুর নিজের স্থান থেকে সরে গিয়ে ইবনে আবি যীবের গ্রীবাদেশে হস্ত রেখে বললেন, মনে রাখবেন, যদি আমি এখানে আসীন না থাকতাম তবে পারসিক, রোমক এবং তুর্কিগণ এ স্থান আপনাদের থেকে অবশ্যই ছিনিয়ে নিত। তার কথার জবাবে ইবনে আবি যীব বললেন, আমীরুল মু'মিনীন! ভুলে যাচ্ছেন কেন খলীফা হযরত ওমর (রাঃ)ও শাসক ছিলেন। তিনিও অর্থ সংগ্রহ করেছেন এবং তা সংগৃহীত হয়েছিল সঠিক পন্থায় এবং তিনি তা' বন্টন করেছেন ইনসাফের সাথে তাঁর বন্টনে কোনরূপ অসমতা ছিল না। এবার খলীফা মনছুর ইবনে আবি যীবের গ্রীবাদেশ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে তাকে এ কথা বলে বিদায় দিলেন, সত্যই আপনি উচিত কথা বলেন। এটা আমার জানা না থাকলে আমি নিশ্চয়ই আপনকে হত্যা করে ফেলতাম। তখন ইবনে আবি যীব খলীফাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আমীরুল মু'মিনীন! আল্লাহর কসম। আমি আপনার পুত্র মাহদীর চেয়েও আপনার অধিক হিতাকাঙ্ক্ষী। এই কথা বলে তিনি খলীফা মানছুরের দরবার থেকে বের হয়ে গেলেন।
পথে তার হযরত সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) এর সাথে সাক্ষাত হল। হযরত সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) তার কথা শুনে বললেন, আপনি এই জালিম লোকটির সাথে যেভাবে কথা বলেছেন, সত্যিই আমি তাতে খুব আনন্দিত হয়েছি; কিন্তু একটি কথা আমার নিকট খুবই খারাপ লেগেছে যে, আপনি তার পুত্রকে মাহদী (অর্থাৎ হেদায়েতপ্রাপ্ত) বলেছেন, আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। তখন ইবনে আবি যীব বললেন, জনাব। আমি তাকে হেদায়েত অর্থে মাহদী বলিনি; বরং তার নামটি মাহদী বিধায়ই আমি তাকে মাহদী বলেছি।
এহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন (৪র্থ খন্ড)
