নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় - পর্ব-১ | হযরত ইমাম গাজ্জালী (রাহঃ)


নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় - পর্ব-১ | হযরত ইমাম গাজ্জালী (রাহঃ)
নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় 




ইমাম গাজ্জালী রঃ এর গুরুত্বপূর্ণ বাণী




॥ প্রবৃত্তিকে তিরস্কার করার নিদর্শন ॥ পর্ব -১



সদা-সর্বদা প্রবৃত্তিকে এই বলিয়া তিরস্কার সহকারে বুঝাইতে থাকিবে যে, হে প্রবৃত্তি!  নিজকে সুচতুর ও বুদ্ধিমান বলিয়া মনে করিয়া থাক, কেহ তোমাকে নির্বোধ বলিয়া গালি দিলে তুমি
অসন্তুষ্ট হইয়া রাগে ফুলিয়া উঠ; অথচ সত্য কথা বলিতে গেলে তোমা অপেক্ষা অধিকতর আহমক বা নির্বোধ কেহই নহে। ভাবিয়া দেখ তো, যাহাকে ধরিবার জন্য একদল সৈন্য শহর প্রাচীরের বহির্ভাগে অপেক্ষমাণ রহিয়াছে, অপরদিকে তাহারা সেই ব্যক্তিকে ধরিয়া নিয়া হত্যা করার জন্য একজন সৈন্যকে শহর প্রাচীরের মধ্যভাগেও প্রেরণ করিয়াছে। এই সংবাদ সঠিক ভাবে জানিতে পারিয়াও যদি সে ব্যক্তি সে সময় খেলাধুলায় মত্ত থাকে, নিজের নিরাপত্তার জন্য কোন প্রকার চেষ্টা না করে, তবে তাহা অপেক্ষা অধিকতর নির্বোধ আর কেহ হইতে পারে ? হে প্রবৃত্তি। নগর প্রাচীরের বহির্ভাগের কবরস্তানের মৃত ব্যক্তিগণ অপেক্ষমাণ সেনাদলের ন্যায় তোমার জন্য অপেক্ষা করিতেছে। তাহারা এই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইয়া দাড়াইয়া রহিয়াছে যে, তোমাকে সঙ্গে না লইয়া তাহারা গন্তব্য পথের দিকে এক পাও অগ্রসর হইবে না। তোমাকে ধরিবার জন্যই মৃত্যুকে সৃষ্টি করা হইয়াছে। মৃত্যু হয়ত আজই তোমাকে ধরিয়া হত্যা করতঃ অপেক্ষমাণ মৃত ব্যক্তিগণের সঙ্গী করিয়া দিতে পারে। মনে কর, আজ তোমাকে ধরিল না, কিন্তু একদিন অবশ্যই ধরিবে এবং তোমার প্রাণ সংহারপূর্বক মৃত ব্যক্তিগণের সঙ্গে মিলাইয়া দিবে। সুতরাং বিশ্বাস করিয়া রাখ যে, যাহা ঘটিবার তাহা ঘটিবেই এমনকি, তাহা এত সুনিশ্চিত যে, এখনই ঘটিয়া গেল মনে করিতে পার, মৃত্যু কাহারও সহিত কোন সময় নির্ধারিত করিয়া আসে না। কাজেই কেহ বলিতে পারে না যে, মৃত্যু শীঘ্রই আসিবে না বিলম্বে আসিবে; রাত্রিকালে আসিবে না দিবাভাগে আসিবে; শীত ঋতুতে আসিবে না গ্রীষ্মকালে আসিবে। মৃত্যু নির্দিষ্ট করিয়া কাহারও নিকট তাহা বলিবে না। যখন সে আসিবে এক মুহূর্তও বিলম্ব করিবে না। সকলকেই অকস্মাৎ  অভাবিতরূপে মৃত্যুর কবলে পড়িতে হয়। মানুষ যে সময় সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিন্ত থাকে ভুলেও মৃত্যুর কথা ভাবে না, তেমন সময় মৃত্যু আসিয়া উপস্থিত হয়। এমতাবস্থায় তুমি যদি পূর্ব হইতে পরলোকের সম্বল সংগ্রহ করতঃ মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হইয়া না থাক, তবে তোমা অপেক্ষা অধিকতর নির্বোধ ও বোকা আর কে হইবে? 
👇
হযরত ইমাম গাজ্জালী (রাহঃ)
(কিমিয়ায়ে সা'আদাত)



ইমাম গাজ্জালীর বাণী - জীবনমুখী বাণী


আল্লাহ্' তায়ালার পছন্দনীয় কার্যে কার লাভ? - হযরত ইমাম গাজ্জালী
আল্লাহ্ তায়ালার পছন্দনীয় কার্য


আল্লাহ্' তায়ালার পছন্দনীয় কার্যে কার লাভ? - হযরত ইমাম গাজ্জালী


আল্লাহ্ তা'আলার পছন্দনীয় বা প্রিয় কার্য বলিলে এমন মনে করিও না যে, সে কার্যে তাঁহার নিজের কোন লাভ বা উপকার আছে। কেননা, লাভ-উপকারের তাঁহার কোনই প্রয়োজন নাই, তিনি তাহা হইতে পবিত্র এবং নির্মুক্ত; বরং তুমি তাঁহার পছন্দনীয় কার্য করিয়া তোমার প্রতি তাঁহার প্রদত্ত নেয়ামত সমূহের শোকর আদায় করিয়া নিজের কর্তব্য পালন করিলে মাত্র। ইহাতে তোমার নিজেরই পারলৌকিক মঙ্গল হইবে। সৃষ্ট জীবের মঙ্গল সাধনই তাঁহার কাম্য। নিম্নের দৃষ্টান্তটি হইতে এই কথাটি আরও পরিষ্কারভাবে বুঝিতে চেষ্টা কর।


মনে কর, কোন একজন নরপতি তাঁহার জনৈক দুরবস্থাপন্ন গোলামের প্রতি কৃপা পরবশ হইলেন। গোলামটি অন্যের কুপরামর্শে বাদশাহ্ হইতে বহুদূরে অবস্থান করিতেছিল। বাদশাহ্ তাহার মূঢ়তা ও দুরবস্থার প্রতি দয়ার্দ্র হইয়া তাহার জন্য একটি অশ্ব এবং কিছু পাথেয় পাঠাইয়া দিলেন। উদ্দেশ্য এই যে, ভৃত্যটি রাজপ্রদত্ত এই অশ্ব ও পাথেয়কে বাদশাহর সান্নিধ্যলাভের উপকরণ মনে করিয়া তৎসাহায্যে বাদশাহর দরবারে আগমনপূর্বক তাহার সান্নিধ্যলাভ এবং উচ্চ সম্মান ও মর্যাদালাভ করিবে। ভৃত্যটি দূরে থাকিলে কিংবা দরবারে আসিলে রাজার কোন লাভ বা লোকসান নাই। সে ফিরিয়া আসিলে রাজার রাজত্ব কিছুমাত্র বাড়িবে না, না আসিলেও কিছু মাত্র হ্রাস পাইবে না; বরং ফিরিয়া আসিলে ভৃত্যেরই মঙ্গল হইবে। রাজ-সভায় প্রত্যাবর্তনপূর্বক ভৃত্যটি উপকৃত ও উচ্চ মর্যাদাপ্রাপ্ত হউক, ইহাই বাদশাহর ইচ্ছা। বাদশাহ দাতা-দয়ালু হইলে তিনি কেবল প্রজা সাধারণের উপকার ও মঙ্গল সাধনেই আনন্দ পান। তাঁহার এই হিত-কামনা প্রজাবৃন্দের জন্যই হইয়া থাকে। নিজের জন্য তিনি কিছু করেন না। ভৃত্য যদি রাজ-প্রদত্ত অশ্বে আরোহণপূর্বক রাজদরবারের দিকে আসিতে আরম্ভ করে এবং তাহার প্রদত্ত পাথেয় ব্যবহার করিতে থাকে, তবে বুঝিতে হইবে যে, সে অশ্ব ও পাথেয় দ্রব্যের শোকর আদায় করিল। কিন্তু ভৃত্য যদি রাজপ্রদত্ত পাথেয় দ্রব্য ভোজনে শক্তি সঞ্চয় করিয়া তাঁহারই প্রদত্ত অশ্বে আরোহণ পূর্বক বিপরীত দিকে যাত্রা করে এবং রাজদরবার হইতে আরও দূরে চলিয়া যায়, তবে বুঝিবে যে, প্রত্যেকটি রাজ-প্রদত্ত নেয়ামতের অপব্যবহার করিয়া তাঁহার প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিল। আর যদি সে অশ্ব ও পাথেয় দ্রব্য ব্যবহার না করিয়া অর্থাৎ, কোন দিকে না গিয়া তথায় বসিয়া বসিয়া রাজ-প্রদত্ত নেয়ামতের অপচয় করিল, তবুও সে অকৃতজ্ঞ বলিয়াই পরিগণিত হইবে। অবশ্য এই অকৃতজ্ঞতা পূর্বোক্ত অকৃতজ্ঞতা অপেক্ষা লঘু হইবে।


  এইরূপে বিশ্বপতি আল্লাহ্ পাকের নেয়ামতসমূহ প্রাপ্ত হইয়া মানুষ যদি উহাকে তাঁহার সান্নিধ্য ও সন্তোষলাভের উদ্দেশ্যে তাঁহার পছন্দনীয় এবাদত ও সৎকার্যে ব্যয় করে, তবে আল্লাহ্ পাকের প্রতি প্রকৃত কৃতজ্ঞতা বা ‘শোকর' প্রকাশ করা হয়। কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা হইতে আরও দূরে সরিয়া যাওয়ার জন্য যদি উক্ত নেয়ামতসমূহ দ্বারা পাপ কার্য করিতে থাকে, তবে সে ব্যক্তি নিতান্ত অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দিল। পক্ষান্তরে যদি উক্ত নেয়ামতগুলি এমন কোন মুবাহ বা নির্দোষ আমোদ-আহ্লাদে ব্যয় করে যাহাতে পাপ বা পুণ্য না হইলেও কোন ধর্মীয় কাজেই আসিল না, তথাপি তাহাকে অকৃতজ্ঞ বলা হইবে। কিন্তু এই অকৃতজ্ঞতা পাপ কার্যে ব্যয় করার অকৃতজ্ঞতা হইতে লঘু হইবে।

👇

হযরত ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)

(কিমিয়ায়ে সা'আদাত)


 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url