মৃত্যু যন্ত্রণা - হযরত ইমাম গাজ্জালী রহঃ
মৃত্যু : চিরস্থায়ী জীবনের সূচনা
![]() |
| মৃত্যু যন্ত্রণা |
মৃত্যুকালীন বিভীষিকাঃ
মৃত্যু যন্ত্রণা - হযরত ইমাম গাজ্জালী রহঃ
প্রাণ হরণকালীন মৃত্যু-যন্ত্রণা - প্রিয় পাঠক! অবগত হও, যদি প্রাণ হরণকালীন মৃত্যু যন্ত্রণা ও বিভীষিকা ভিন্ন সম্মুখের দিকে আর কোন প্রকারের ভয় বা ক্ষতির সম্ভাবনা নাও থাকিত, তথাপি এক মৃত্যুকালীন বিভীষিকা ও যন্ত্রণার কথা স্মরণ করিয়াই দুনিয়ার সমস্ত সুখ-শান্তি আমোদ-আহলাদ লোকের নিকট বিশ্বাদ ও নিরানন্দ হইয়া পড়িত। যদি কাহারও মনে এরূপ ভয় ঢুকিয়া পড়ে যে, কোন এক দুর্দান্ত সিপাহী তাহার গৃহে প্রবেশ করিয়া লৌহ গদার আঘাতে তাহার অস্থি মাংস চূর্ণ-বিচূর্ণ করিয়া ফেলিবে, তবে সে ব্যক্তি কখনও আহার-নিদ্রায় শান্তি পাইতে পারে না। সিপাহীর আগমন এবং লৌহ-গদার আঘাতে নিষ্পেষণ শুধু সম্ভাবনার মধ্যেই রহিয়াছে, নিশ্চয়তা নাই, তথাপি সন্দেহের বশবর্তী হইয়া গৃহস্বামী আহার-নিদ্রার সুখ-শান্তি ভুলিয়া যায়। কিন্তু আজরায়ীল (আঃ)-এর আগমন ও রূহ কবয করা ধ্রুব সত্য, তাহাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নাই। আবার রূহ কবয করার বা প্রাণহরণের যন্ত্রণা তুর্কী সিপাহীর লৌহ-গদার আঘাত যন্ত্রণা অপেক্ষা অসংখ্য গুণে অধিক কষ্টদায়ক। কিন্তু মানুষ সংসারের মোহমদে মত্ত রহিয়াছে বলিয়া মৃত্যুকালীন ভীষণ যন্ত্রণার ভয় তাহাদের হৃদয়ে প্রবেশ করিতেছে না। সকল যুগের বুযুর্গানে দ্বীন এ কথার উপর একমত হইয়াছেন যে, দেহ হইতে প্রাণ বিচ্ছিন্ন করাকালে মুমূর্ষু ব্যক্তি যে কষ্ট অনুভব করিয়া থাকে তাহা তরবারির আঘাতে খণ্ড-বিখণ্ড হওয়ার কষ্ট অপেক্ষা কঠিন যন্ত্রণাদায়ক। ইহার কারণ এই যে, যেস্থান তরবারির আঘাতে কর্তিত হয় এবং শরীরের মাংস-চর্ম বিভক্ত হইয়া পড়ে, কেবল তথাকার রূহ অর্থাৎ, সেই স্থানের শক্তি ও অনুভবশক্তিই সেই দুঃখ ও যন্ত্রণা অনুভব করে। কিন্তু দেহের কোন স্থানে অগ্নিদগ্ধ হইলে উহার সম্ভ্রাপ ও যন্ত্রণা সর্বশরীরে পরিব্যাপ্ত হইয়া পড়ে। এই কারণে তলোয়ারের যখম অপেক্ষা অগ্নির দাহনের ব্যথা ও যন্ত্রণা অধিক এবং কঠিনতর হইয়া থাকে। রূহ বা জীবনশক্তি শরীরের সর্বত্র ছড়াইয়া রহিয়াছে। অতএব, সেই প্রাণ দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন করিবার সময় উহার চোট ও যন্ত্রণা শরীরের সর্বস্থানেই অনুভূত হইয়া থাকে। কিন্তু মৃত্যু যন্ত্রণা উপস্থিত হইলে মুমূর্ষু ব্যক্তি দুর্বল ও অক্ষম হইয়া এই কারণে নীরব নিস্তব্ধ হইয়া থাকে যে, মৃত্যু যন্ত্রণার তীব্রতা ও কঠোরতাবশতঃ তাহার জিহ্বা অসাড় ও নিশ্চল হইয়া যায়, বুদ্ধি সক্রিয় থাকে না। এমনকি, দেহের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সেই যন্ত্রণার চোটে অবশ ও অসাড় হইয়া পড়ে। এই মৃত্যু যন্ত্রণার প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করিয়া বুঝাইবার বস্তু নহে। যে ব্যক্তি এই যন্ত্রণা ভোগ করিয়াছে সে ব্যক্তি ভিন্ন আর কেহ ইহা বুঝিতে পারে না। কেবল আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুসসালাম তাহাদের অলৌকিক জ্ঞানের দ্বারা তাহা উপলব্ধি করিয়াছেন।
👇
হযরত ইমাম গাজ্জালী (রাহঃ)
(কিমিয়ায়ে সা'আদাত)
.png)