পরকালের প্রস্তুতি | মৃত্যুর প্রস্তুতি - হযরত ইমাম গাজ্জালী (রাহঃ)


ইমাম গাজ্জালীর বাণী



পরকালের প্রস্তুতি | মৃত্যুর প্রস্তুতি - হযরত ইমাম গাজ্জালী (রাহঃ)
মৃত্যুর প্রস্তুতি




পরকালের প্রস্তুতি | মৃত্যুর প্রস্তুতি - হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমাতুল্লাহি্


মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি- – যাহা হউক, প্রত্যেকেই মনে করিয়া থাকে: 'আমি দীর্ঘ জীবনের আশা করি না। মৃত্যু যে কোন মুহূর্তে আসিয়া পড়িতে পারে বলিয়া বিশ্বাস করি।' এ কথা শুধু মুখে বলিলে চলিবে না। মৃত্যুকে নিকটবর্তী বলিয়া যাহার মনে ভয় আছে, সে অবশ্যই মৃত্যুর আয়োজনের উদ্দেশ্যে তাড়াতাড়ি নেক কার্য সম্পাদন করিতে তৎপর হইয়া উঠে। এরূপ ব্যক্তি এক মুহূর্তকাল অধিক সময় পাইলে সেই সময়টুকুকে মহাসুযোগ মনে করিয়া সেই সুযোগটুকুর পুরাপুরি সদ্ব্যবহার করিয়া লয়। হযরত রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ ‘পাঁচ বস্তুর পূর্বে পাঁচ বস্তুকে গনীমত বা মহাসুযোগ মনে করিওঃ (ক) বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকে, অর্থাৎ, বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পূর্বে যৌবনে সৎকার্য করার সুযোগ হেলায় হারাইও না, পূর্ণরূপে সদ্ব্যবহার করিয়া লইও। (খ) অসুস্থতা বা রোগ-ব্যাধি আসিবার পূর্বে সুস্থ অবস্থাকে মহাসুযোগ মনে করিয়া উহার সদ্ব্যবহার করিও। (গ) অভাবগ্রস্ত হইয়া পড়ার পূর্বে সচ্ছল অবস্থাকে মহাসুযোগ মনে করিয়া উহার সদ্ব্যবহার করিও। (ঘ) কর্ম ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে সুযোগ মনে করিও এবং (ঙ) মৃত্যু আসিয়া উপস্থিত হওয়ার পূর্বে জীবনকালের সদ্ব্যবহার করিও।' হুযূরে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলিয়াছেনঃ ‘সুস্থতা ও সচ্ছলতা এমন দুইটি মহামূল্যবান নেয়ামত যে, তাহা প্রাপ্ত হইলে অধিকাংশ সময়ই মানুষ তাহার সদ্ব্যবহার না করিয়া বরং ক্ষতিগ্রস্ত হইয়া থাকে।' ছাহাবায়ে কেরামের মধ্যে কাহারও হৃদয়ে সাংসারিক মোহ ও পরলোকের প্রতি অমনোযোগিতার লক্ষণ টের পাইলে হুযুরে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনই তাঁহাদের মধ্যে দাঁড়াইয়া ঘোষণা করিতেনঃ ‘মৃত্যু আসিয়া পড়িল, জানি না কাহারও সৌভাগ্য লইয়া আসিল, না দুর্ভাগ্য লইয়া আসিল।

হযরত হুযাইফা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলিয়াছেনঃ প্রত্যেক দিন ছোবহে-ছাদেকের সময় আসমান হইতে ঘোষণা করা হয়, ‘প্রস্থান! প্রস্থান !!’

হযরত দাঊদ তায়ী রাহেমাহুল্লাহকে লোকে দেখিতে পাইল ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াইয়া মসজিদের দিকে নামায পড়িবার জন্য যাইতেছেন। মানুষ তাহাকে দৌড়াইবার কারণ জিজ্ঞাসা করিলে তিনি উত্তর করিলেনঃ ‘শহরের উপকণ্ঠে সেনাদল আমার প্রতীক্ষায় দাঁড়াইয়া রহিয়াছে। (অর্থাৎ, শহরের প্রান্তভাগের কবরস্তানে সমাহিত মৃত লোকেরা জীবিত লোকদের জন্য অপেক্ষা করিতেছে।) আমাকে সঙ্গে না লওয়া পর্যন্ত তাহারা এখান হইতে পরলোকের দিকে যাত্রা করিবে না।”

হযরত আবু মূসা আশআরী রাযিআল্লাহু আনহু শেষ বয়সে পারলৌকিক কার্যে অত্যধিক সাধনা ও পরিশ্রম করিতেন। লোকে তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল: ‘এই দুর্বল শরীরে এত কঠোর পরিশ্রম না করিলে আপনার কি ক্ষতি হইতে পারে?’ তদুত্তরে তিনি বলিয়াছিলেনঃ “দেখ, ঘোড় দৌড়ের মাঠে ঘোড়াগুলি দৌড় আরম্ভ করিলে যখন মাঠের শেষ প্রান্তে লক্ষ্যস্থলের নিকটবর্তী হয়, তখন শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগে পূর্বাপেক্ষা অধিক প্রচণ্ডবেগে দৌড়াইতে আরম্ভ করে, এখন আমি আমার বয়সরূপ মাঠের শেষভাগে পৌঁছিয়াছি, মৃত্যুরূপ লক্ষ্যস্থান নিকটবর্তী হইয়াছে। এই কারণেই আমি রিয়াযত ও পরিশ্রমের কোন অংশ বাকী রাখিতেছি না, সর্বশক্তি প্রয়োগে চেষ্টা করিতেছি।'
👇
হযরত ইমাম গাজ্জালী (রাহঃ)
(কিমিয়ায়ে সা'আদাত)


আরো কিছু কথাঃ 

এক বুযর্গ বলেন, পূর্ববর্তীগণ যে বিষয়ের আলোচনা করেছেন, সে বিষয়ে চুপ থাকা অন্যায় এবং যে বিষয়ে তারা কোন আলোচনা করেন নি সে বিষয়ে আলোচনা করা সীমাতিক্রম। হুযুরে পাক (ﷺ) বলেছেনঃ মধ্যম পথ অবলম্বন কর। যে এ পথ থেকে সামনে চলে যায়, সে ফিরে আসুক এবং যে পেছনে পড়ে থাকে, সে সামনে এগিয়ে যাক। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ পথভ্রষ্টগণ পথভ্রষ্টতাকে ভাল মনে করে।
👇
এহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন (১ম খন্ড)


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url