হযরত রসুলুল্লাহ ﷺ এর ৩০ টি মোজেজা
ইসলামিক অলৌকিক ঘটনা | বিশ্ব নবীর মোজেজা
![]() |
| বিশ্ব নবীর ﷺ মোজেজা |
শ্রেষ্ঠ নবী ﷺ | হযরত রসুলুল্লাহ ﷺ এর ৩০ টি মোজেজা - হযরত ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)
হুযুরে পাক ﷺ এর সে অসংখ্য মু'জিযাহ থেকে কতগুলো মু'জিযাহ আমি উল্লেখ করব। সেগুলো ছহীহ হাদীস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং ছহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ নামক শ্রেষ্ঠ হাদীস গ্রন্থে উল্লিখিত।
(১) যখন মক্কার কুরায়েশগণ তাঁকে চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করতে বলেছিল তিনি তা করে দেখিয়েছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
(২) একদা হযরত জাবের (রাঃ)এর গৃহে অল্প খাদ্য ছিল; কিন্তু খন্দকের যুদ্ধের সময় সমস্ত লোককে হুযুরে পাক ﷺ তাঁর গৃহে আহার করিয়েছিলেন। তদ্রূপ আবু তালহার গৃহে মাত্র কয়েকজনের খাদ্য তিনি বহুসংখ্যক লোককে তৃপ্তি সহকারে খাইয়ে দিয়েছিলেন। তখনও খন্দকের অবরোধ ছিল। (বুখারী ও মুসলিম)
(৩) আর একবার মাত্র চার মোদ যব এবং একটি মাত্র বকরীর বাচ্চার গোশত দ্বারা তিনি আশিজন লোককে পরিভূতভাবে আহার করিয়েছিলেন। (বায়হাকী)
(৪) একবার হযরত আদাছ (রাঃ) তাঁর হস্তে বহন করে যে সব নিতে পেরেছিলেন তদ্বারা হুযুরে পাক ﷺ আশি জনেরও বেশী লোককে খাদ্য দান করেছিলেন। (বায়হাকী)
(৫) একবার বশীর (রাঃ) এর কন্যার নিকট সামান্য খুরমা ছিল। কিন্তু তদ্বারাই হুযুরে পাক ﷺ তাঁর সমস্ত সৈন্যকে পরিতৃপ্তি সহকারে আহার করিয়েছিলেন। এমন কি তাদের আহারের পর খাদ্য উদ্বৃত্তও রয়ে গিয়েছিল। (বায়হাকী)
(৬) একদা হুযুরে পাক (দঃ)এর অঙ্গুলির ভিতর থেকে পানি প্রবাহিত হতে লাগল। এমন কি তিনি নিজে ও তাঁর সৈন্যগণ তা পান করে পরিতৃপ্ত হয়েছিলেন এবং তারা ঐ পানি দ্বারা অজুও করেছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
(৭) একবার তাবুকের কুয়ায় হুযুরে পাক (দঃ) অজুর পানি ফেলেছিলেন। ঐ কূয়ায় তখন মোটেই পানি ছিল না। কুয়াটি একেবারেই শুষ্ক ছিল; কিন্তু তাঁর উক্ত অজুর পানির বরকতে কুয়া থেকে এত পানি প্রবাহিত হতে লাগল যে, তা’ প্রায় সহস্রাধিক সৈন্য পান করে পরিতৃপ্ত হল। (বুখারী ও মুসলিম)
(৮) আর একবার হোদায়বিয়ার কূপে পানি ছিল না। হুযুরে পাক (দঃ) তার অজুর অবশিষ্ট পানি ঐ কূপে নিক্ষেপ করলে দেখা গেল যে, অজস্র ধারে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। প্রায় পনের শ'ছাহাবী তা পান করে পরিতৃপ্ত হয়েছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
(৯) হযরত রাসূলে করীম ﷺ হযরত ওমর (রাঃ)কে একদা আদেশ দিলেন, এ দলের চার শ' আরোহীকে অল্প খেজুর দ্বারা পরিতৃপ্ত কর। তখন তারা সেই সামান্য গুটিকতক মাত্র খেজুর খেয়েই পরিতৃপ্ত হল। পরে দেখা গেল আরও সেই পরিমাণ খেজুর রয়ে গেছে। (আহমদ)
(১০) একদা তিনি শত্রু সৈন্যদের সামনে এক মুষ্টি বালু নিক্ষেপ করলে তাদের চক্ষু অন্ধ হয়ে গেল। তখনই এ আয়াত অবতীর্ণ হল যে, "যখন তুমি নিক্ষেপ করেছ তখন তুমি তা’ নিক্ষেপ করনি, আল্লাহই তা' নিক্ষেপ করেছিলেন। (ইবনে আবদারিয়া)
(১১) আল্লাহতায়ালা হুযুরে পাক ﷺ এর মাধ্যমে গণকদের ভবিষ্যত বার্তা ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন। (খোরায়েতী)
(১২) হুযুরে পাক ﷺ একটি খেজুর বৃক্ষের কান্ডের উপর দাঁড়িয়ে খুৎবাহ দিতেন। যখন তার পরিবর্তে মিম্বর তৈয়ার করা হল, তখন খেজুর বৃক্ষের কান্ডটি উষ্ট্রের ন্যায় মৃদু মৃদু শব্দ করতে শুরু করল। সে শব্দ সমস্ত ছাহাবীই শুনেছিলেন, তারপর যখন হুযুরে পাক (দঃ) তার উপর স্বীয় পবিত্র হস্ত বুলিয়েছিলেন, তখন সে শব্দ বন্ধ হল। (জাবের)
(১৩) একদা হুযুরে পাক ﷺ ইয়াহুদীদেরকে মুবাহালাহ করতে বললেন, অর্থাৎ যদি তারা মিথ্যাবাদী হয়, তবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। পরক্ষণে সংবাদ পেলেন যে, তারা এ মুবাহালাহ করবে না। তারা হুযুর ﷺ এর কথা বিশ্বাস করে মুবাহালাহ করে নি যে, মুবাহালাহ করলে তাদের মৃত্যু হবে। এ ঘটনা কুরআনে মজীদে সূরা জুমআয় উল্লেখ রয়েছে এবং তা' দুনিয়ার প্রত্যেক মসজিদে পাঠ করা হয়। (বায়হাকী)
(১৪) হযরত রাসূলে করীম (দঃ) হযরত ওসমান (রাঃ)কে একটি বিপদের ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন এবং সে বিপদের পরই বেহেশতবাসী হবেন বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)। তদনুযায়ী-ই হযরতও সমান (রাঃ) শাহাদাত বরণ করেছিলেন।
(১৫) হুযুরে পাক (দঃ) হযরত আম্মার (রাঃ) কে বলেছিলেন যে, এক বিদ্রোহী দল তাকে হত্যা করবে। ফলে তিনি সেভাবেই শহীদ হয়েছিলেন।
(১৬) হযরত হাসান (রাঃ) এর বিষয়ে হযরত রাসূলে করীম (দঃ) বলেছিলেন যে, আল্লাহতায়ালা তাঁর দ্বারা মুসলমানের দুটি বৃহৎ দলের ফেতনা মীমাংসা করাবেন। (আরি বাকরাহ)।
(১৭) এক ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করেছিল। হুযুরে পাক (দঃ) তার সম্পর্কে বলেছিলেন যে, সে দোযখবাসী হবে। তারপর জানা গেল যে, সে আত্মহত্যা করে প্রাণত্যাগ করেছে। (বুখারী ও মুসলিম) এসব খবর চন্দ্রের গতিবিধি, গণনা বা কোন প্রকার মন্ত্র তন্ত্র দ্বারা বলা যায় না। কিন্তু আল্লাহর অহী দ্বারাই বলা যায়।
(১৮) হুযুরে পাক (দঃ) মক্কা থেকে হিজরত করবার সময়ে সূরাকা বিন মালেক নামক একব্যক্তি তাঁর অনুসরণ করতে গেলে তার অশ্বের পদদ্বয় মাটির মধ্যে বসে গেল। সে এ বিপদে হুযুরে পাক (দঃ)এর নিকট সাহায্য চাইলে হুযুর (দঃ) তার জন্য দোয়া করলেন এবং অশ্ব মুক্তি পেল। তারপর সে চলে গেল। তিনি তাকে এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, তাঁর বাহুদ্বয়ে শীঘ্রই পারস্যরাজের বালা পরান হবে। পরে তা-ই হয়েছিল। অর্থাৎ পারস্য জয় করবার পর পারস্য রাজ্যের বালা তার হাতে পরিয়ে দেয়া হয়েছিল। (বুখারী ও মুসলিম)।
(১৯) আসওয়াদ আনাসী মিথ্যাবাদী ছিল। সে হুযুরে পাক ﷺ এর সময়েই নবুয়ত দাবী করেছিল। সে ইয়েমেন প্রদেশস্থ ছানাআ শহরের অধিবাসী ছিল। সে রাত্রেই হুযুরে পাক ﷺ মদীনায় তার মৃত্যু সংবাদ দিয়েছিলেন এবং যে তাকে হত্যা করেছে তার নামও তিনি বলেছিলেন। তার নাম ফিরোজ দাইলামী (বুখারী ও মুসলিম)
(২০) একশ' কুরায়েশ হুযুরে পাক ﷺ কে আক্রমণ করার আশায় উপবিষ্ট থাকাকালে হুযুরে পাক (দঃ) তাদের নিকট দিয়ে যাবার কালে তাদের মস্তকে ধূলা দিয়ে চলে গেলেন। তার ফলে তারা হুযুরে পাক (দঃ)কে দেখতে পেল না। (ইবনে মারদাবিয়াহ)।
(২১) একদা একটি উষ্ট্র ছাহাবীদের সামনে হুযুরে পাক (দঃ)এর নিকট নালিশ করল যে, তার মালিক তাকে বহু কষ্ট দিচ্ছে।
(২২) একদা কতিপয় ছাহাবী হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট সমবেত হলেন। হুযুরে পাক (দঃ) তাদেরকে বললেন যে, তোমাদের মধ্যে একব্যক্তি দোযখে যাবে। তারপর ওহদের ন্যায় কোন এক পর্বত তাদের উপর পতিত হলে তারা সবাই ধর্মপথে মারা গেল, কিন্তু তন্মধ্যে একজন ধর্মদ্রোহী হয়ে মারা গেল। (দারেকুৎনী)।
(২৩) তিনি একদা কতকজন ছাহাবীকে বলেছিলেন, তোমাদের মধ্যে যে সবার শেষে প্রাণ ত্যাগ করবে সে আগুনে পুড়ে মারা যাবে। (তিবরানী)।
(২৪) হুযুরে পাক (দঃ) মলমূত্র ত্যাগের জন্য তাকে আড়াল করবার উদ্দেশ্যে দুটি বৃক্ষকে ডাকলেন। বৃক্ষ দুটি তথায় একত্র হয়ে তাঁকে আড়াল করল এবং মলমূত্র ত্যাগ করবার পর তাঁর আদেশ মতে তারা যথাস্থানে চলে গেল। (আহমদ)
(২৫) হুযুরে পাক (দঃ) মধ্যমাকৃতির লোক ছিলেন, কিন্তু যখন তিনি দীর্ঘাকৃতির লোকের সাথে চলতেন, তখন তাঁকেই অধিক দীর্ঘ দেখা যেত।
(২৬) একদা আমের বিন তোফায়েল এবং আরবাদ বিন কায়েস এই দু'ব্যক্তি হুযুরে পাক (দঃ)কে হত্যা করবার উদ্দেশ্যে এল। এরা দুজনই আরবের বিখ্যাত ঘোড়সওয়ার ছিল। তাদের উদ্দেশ্য প্রকাশ পেয়ে গেলে তিনি তাদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করলেন। ফলে আমের ওলাওঠায় এবং আরবাদ বজ্রপাতে প্রাণত্যাগ করল (ইবনে আব্বাস)।
(২৭) হুযুরে পাক (দঃ) বলেছিলেন, আবু বিন হানাফকে আমি হত্যা করব। ওহোদের যুদ্ধে হুযুরে পাক (দঃ) তাকে সামান্য আঘাত করায়ই তার প্রাণবিয়োগ ঘটল (বায়হাকী)।
(২৮) হুযুরে পাক (দঃ) এর খাদ্যে বিষ মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল। যে ব্যক্তি প্রথম সে খাদ্য ভক্ষণ করল, সে মারা গেল; কিন্তু হুযুরে পাক (দঃ) তা থেকে কিছু খাদ্য খাবার পরও চার বছর জীবিত ছিলেন। উক্ত বিষ মিশ্রিত খাদ্য বলে উঠেছিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মধ্যে বিষ মিশ্রিত আছে।
(২৯) বদরের যুদ্ধে হুযুরে পাক (দঃ) প্রত্যেক কুরায়েশ নেতাদের নির্দিষ্ট স্থানের কথা বলে দিয়েছিলেন এবং তাদের প্রত্যেকের পরিণামের কথাও তিনি পূর্বাহ্নেই ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর কথা অনুযায়ী ফলাফল দেখা দিয়েছিল। (হযরত ওমর (রাঃ) এর হাদীস)
(৩০) হুযুরে পাক ﷺ বলেছিলেন, আমার কতক উম্মত সামুদ্রিক যুদ্ধে রত হবে। তাঁর একথা বাস্তবে রূপায়িত হয়েছিল (বুখারী ও মুসলিম)।
👇
হযরত ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)
(এহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন)
