মহামারীর স্থান হইতে পলায়ন বা তথায় গমন করা অনুচিত - এবং কেন? - হযরত ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)
![]() |
| মহামারীতে করণীয় |
॥ মহামারীর স্থান হইতে পলায়ন বা তথায় গমন করা অনুচিত ।।
আমীরুল মু'মিনীন হযরত ওমর ফারূক রাযিয়াল্লাহু আনহু একদিন শাম দেশে যাইতেছিলেন। পথিমধ্যে তিনি জানিতে পারিলেন যে, তথায় প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়াছে। এই সংবাদ শুনিয়া তাঁহার সহগামীদের মধ্যে দ্বিমত উপস্থিত হইল, কেহ কেহ বলিলেনঃ 'এমন মহামারীর স্থানে আমরা যাইব না।" অপর দল বলিল: 'আল্লাহ্ তা'আলার বিধান ও ইচ্ছা হইতে পলায়ন করিব না।' হযরত ওমর (রাঃ) বলিলেন: 'আমরা আল্লাহর নির্ধারিত এক অদৃষ্ট বিধান হইতে আর এক অদৃষ্ট বিধানের প্রতি পলায়ন করিব।' তৎসঙ্গে ইহাও বলিলেন যে-- 'মনে কর তোমাদের মধ্যে কাহারও দুইটি চারণভূমি আছে। তন্মধ্যে একটি নিতান্ত সতেজ ও সবুজ, তৃণলতা ও ঘাস-পাতায় পরিশোভিত। আর অপরটি তৃণলতা শূন্য, শুষ্ক, কঙ্করময়। এখন তাহার রাখাল বকরীপালকে এতদুভয়ের যে কোনটির দিকেই লইয়া যায় তাহাই আল্লাহ্ পাকের নির্ধারিত অদৃষ্ট বিধান বলিয়া বুঝিতে হইবে। অতঃপর তিনি হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) কে ডাকাইয়া এ সম্বন্ধে পরামর্শ চাহিলেন, "আপনার অভিমত কি?" তিনি বলিলেনঃ আমি হযরত রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলিতে শুনিয়াছিঃ “তোমরা যদি শুনিতে পাও যে, অমুক স্থানে মহামারী আরম্ভ হইয়াছে, তবে তোমরা সে স্থানে যাইও না, আর তোমরা যে স্থানে বাস করিতেছ যদি সেখানে মহামারী আরম্ভ হইয়া যায়, তবে তথা হইতে পলায়ন করিও না।" ইহা শুনিয়া হযরত ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলিলেনঃ 'আলহামদুলিল্লাহ্' আমার অভিমত হুযুর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের অনুরূপ হইয়াছে। পরিশেষে কাফেলার সমুদয় ছাহাবী (রাঃ) একথার উপর একমত হইয়া মদীনা শরীফের দিকে ফিরিয়া আসিলেন।
|| দুই কারণে মহামারীর স্থান হইতে
সুস্থ লোকের পলায়ন নিষিদ্ধ ||
যে স্থানে মহামারী আরম্ভ হইয়াছে তথা হইতে সুস্থ লোকের পলায়ন নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ এই যে, (১) সবল ও সুস্থ লোক সে স্থান ত্যাগ করিয়া চলিয়া গেলে রোগাক্রান্ত লোকদের সেবা-শুশ্রুষার অভাব ঘটিয়া তাহারা চরম দুর্দশায় পতিত হইবে। (২) মহামারীর স্থানের দূষিত আবহাওয়া সুস্থ লোকের দেহেও প্রবেশ করিয়া থাকে। এমতাবস্থায় পালাইয়া পীড়ার হাত হইতে আত্মরক্ষা করার আশা বৃথা। তদুপরি পলায়ন করিয়া যে স্থানে যাইবে তাহাদের দ্বারা তথাকার অধিবাসীদের মধ্যে রোগ সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাও প্রবলভাবে রহিয়াছে। কোন কোন হাদীসে এরূপ উল্লেখ আছে যে, রোগাক্রান্ত হওয়ার ভয়ে মহামারীর স্থান হইতে পলায়ন করা আর কাফেরদের ভয়ে যুদ্ধক্ষেত্র হইতে পলায়ন করা সমান কথা। এই সমতার কারণ এই যে, যুদ্ধক্ষেত্র হইতে পলায়ন করিলে যুদ্ধরত অন্যান্য যোদ্ধা এবং যুদ্ধাহত ব্যক্তিদের উৎসাহ ভাঙ্গিয়া যায়। মহামারী আক্রান্ত স্থল হইতে সুস্থ লোকেরা পলায়ন করিলে তথায় অবশিষ্ট সুস্থ লোকেরা সাহসহারা হইয়া পড়ে এবং রোগাক্রান্ত ব্যক্তিগণ নিতান্ত অসহায় ও হতাশ হইয়া যায়। বিশষতঃ সুস্থ লোকেরা সকলে পালাইয়া গেলে রোগাক্রান্ত লোকদিগকে পথ্য ও ঔষধ-পত্র যোগাইয়া দেওয়ার ও সেবা-শুশ্রুষা করার মত কেহ থাকিবে না। কাজেই রুগ্ন ব্যক্তিদের দুর্গতি ভোগ ও ধ্বংস অনিবার্য। অপরপক্ষে যাহারা পলায়ন করিবে তাহাদেরও রোগের হাত হইতে নিস্তার পাওয়া নিশ্চিত নহে; বরং সন্দেহমূলক। কেননা, মহামারীর স্থানে থাকিয়া তাহাদের শরীরে ক্রমে ক্রমে যে দুষিত আবহাওয়া ও রোগজীবাণু প্রবেশ করিয়াছে অন্য স্থানে গেলেও তাহারা উক্ত রোগে আক্রান্ত হইয়া পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রহিয়াছে।
👇
হযরত ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)
(কিমিয়ায়ে সা'আদাত)
