নেককারদের মৃত্যুকালীন অবস্থা


মৃত্যু মুমিনের জন্য উপহার - নেককার গনের মৃত্যুর অবস্থা



নেককারদের মৃত্যুকালীন অবস্থা
নেক্কারের মৃত্যু

নেক্কারের মৃত্যু - মাথায় হাত দিয়ে ইবলিশের কান্না।


একটি হাদীছে বর্ণিত আছে আল্লাহ্ পাক যখন বান্দার উপর সন্তুষ্ট হন তখন মালাকুল মউতকে বলেন অমুক বান্দার রূহ্ নিয়া আস আমি তাহাকে শান্তি পৌছাইব! তাহার পরীক্ষা হইয়া গিয়াছে। আমার মর্জি মোতাবেক সে পাশ করিয়াছে। মালাকুল মউত তাহার নিকট পাঁচশত ফেরেশতাকে সঙ্গে করিয়া আসে । তন্মধ্যে প্রত্যেক ফেরেশ্তা সেই ব্যক্তিকে নুতন নুতন সুসংবাদ দান করে যাহা অন্য ফেরেশ্তা দেয় নাই। তাহাদের কাছে রাইহান ফুলের ডাল ও জাফরানের শিকড় থাকে। ফেরেশতারা দুই কাতারে লাইন করিয়া দাঁড়াইয়া যায়। ইবলীছ এই দৃশ্য দেখিয়া মাথায় হাত দিয়া চিৎকার দিয়া কাঁদিতে থাকে । ইহা দেখিয়া তাহার সাঙ্গ পাঙ্গরা দৌড়াইয়া আসিয়া জিজ্ঞাসা করে সর্দার ব্যাপার কি? সে বলিতে থাকে কমবখ্তগণ কোথাকার, দেখিতেছনা কি হইতেছে? তোমরা কোথায় মরিয়া গিয়াছিলে? তাহারা বলিবে হে আমাদের সর্দার! আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছি। কিন্তু তবুও সে গোনাহ্ হইতে বাচিয়া রহিয়াছে। হজরত জাবের বিন্ জিয়াদের এন্তেকালের সময় কেহ জিজ্ঞাস করিয়াছিল আপনার কোন খাহেশ বাকী রহিয়াছে কি? তিনি বলিলেন হাছানের সহিত মোলাকাত করিতে চাই। হজরত হাছান বছরী (রহঃ) যখন তাশরীফ আনিলেন হজরত জাবের বলিলেন ভাই ইহা বিদায়ের সময়, চলিয়া যাইতেছি। অথচ এতটুকু খবর নাই যে জান্নাতের দিকে যাইতেছি না জাহান্নামের দিকে।


হজরত তামীম দারী (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্ পাক মালাকুল মউতকে বলেন আমার অমুক অলীর নিকট গমন কর এবং তাহার রুহু নিয়া আস আমি খুশী ও না খুশী উভয় হালতেই তাহার পরীক্ষা করিয়াছি। ইহাতে সে আমার মর্জি মোতাবেক কামিয়াব হইয়াছে। এখন আমি চাই তাহাকে নিয়া আস তবে সে দুনিয়ার কষ্ট ক্লেশ হইতে নাজাত পাইয়া যাইবে। হজরত আজরাঈল (আঃ) তখন পাঁচশত ফেরেশতার জমাত নিয়া তাহার নিকট আসে। তাহাদের নিকট জান্নাতের কাফন থাকে ও প্রত্যেকের হাতে রাইহানের ফুলদানী হয় ও প্রত্যেক ফুলদানীতে বিশ প্রকার রং হয়। আবার প্রত্যেক রং এ- নতুন খুশবু হয় এবং একটা সাদা রুমালের মধ্যে মেশকের তীব্র সুগন্ধি ছড়াইতে থাকে । আজরাঈল (আঃ) তাহার মাথার দিকে বসে ও ফেরেশতাগণ চতুর্দিকে ঘিরিয়া ফেলে ও মেশক ওয়ালা সেই রুমাল তাহার থুত্নীর নীচে রাখা হয় জান্নাতের দরওয়াজা তাহার নজরের সামনে খুলিয়া দেওয়া হয়। তাহার দিলকে জান্নাতের নতুন নতুন জিনিসের দ্বারা প্রলোভন দেওয়া হয় যেমন কান্নার সময় বাচ্চার মনকে প্রলোভন দেওয়া হয়। কখনও হুর সমূহকে দেখানো হয় আবার কখনও সেখানের ফল ফুল এবং পোশাক পরিচ্ছদকে দেখানো হয়। হুরগণ তাহার সম্মুখে আনন্দে নাচিতে থাকে। এই সব দৃশ্য দেখিয়া তাহার রুহ শরীর হইতে বাহির হইবার জন্য এই ভাবে ছটপট করিতে থাকে যেমন খাঁচার মধ্যে পাখী ছটপট করিয়া থাকে এবং হজরত আজরাঈল (আঃ) তাহাকে বলে হে মোবারক রুহ্! কন্টক বিহীন ফুল এবং থোকা থোকা কলা ও লম্বা লম্বা ছায়া এবং প্রবাহিত পানিওয়ালা জান্নাতের দিকে চল। (ছুরায়ে ওয়াকেয়ায় যাহার বর্ণনা রহিয়াছে) মালাকুল মউত আল্লাহর দরবারে নিজের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য সেই রুহের সহিত খুব নম্র ব্যবহার করে যেমন ব্যবহার মা বাচ্চাদের সহিত করিয়া থাকে। তারপর সেই রুহ্ শরীর হইতে এত সহজে বাহির হইয়া পড়ে যেমন আটা হইতে পষম বাহির করিয়া ফেলা হয়। রুহ্ বাহির হইবার পর সমস্ত ফেরেশতা তাহাকে ছালাম করে ও বেহেশতে প্রবেশ করিবার সুসংবাদ দান করে। কোরআনে পাকে ইহারই বর্ণনা আসিয়াছে





الذين تتوقهم الملك طيبين الاية. نحلم


এবং ছুরায়ে ওয়াকেয়াতেও নৈকট্য লাভ কারী বান্দাদের বিষয় বর্ণিত হইয়াছে—


تروح وريحان وجنت نعی۳


শরীর হইতে রুহ্ বিদায়ের সময় বলিয়া যায়, আল্লাহ্ তোমাকে ভাল প্রতিদান দান করুন যেহেতু তুমি আল্লাহর এবাদতে জলদি করিতে ও তাহার নাফরমানীতে অলসতা করিতে। আজ তোমায় মোবারকবাদ! তুমি নিজেও আজাব হইতে মুক্তি পাইয়াছ আমাকেও মুক্তি করিয়াছ। এই কথা শরীর ও রূহ্কে বলিয়া থাকে । তাহার বিচ্ছেদে জমীনের ঐ অংশ কাঁদিতে থাকে যেখান দিয়া তাহার আমল উপরে উঠিত। আর যেখান দিয়া তাঁহার রিজিক অবতীর্ণ হইত। তারপর সেই পাঁচশত ফেরেশতাগণ মুর্দার গোছলের মধ্যে শরীক হয়। মুর্দাকে কাৎ করাইলে ফেরেশ্তাগণ তাহাকে কাৎ করাইয়া দেয় ও কাফন পরাইবার আগেই ফেরেশতাগণ তাহাকে জান্নাতের কাফন পরাইয়া দেয়।


তারপর খুশবু লাগানোর পূর্বেই ফেরেশতাগণ তাহাকে জান্নাতের খুশবু লাগাইয়া দেয়। অতঃপর তাহার দরওয়াজা হইতে কবর পর্যন্ত ফেরেশতারা কাতার বন্দী হইয়া দাঁড়াইয়া যায় ও দোয়া এস্তেগফার দ্বারা তাহার জানাজায় এস্তেকবাল করে।


এইসব দৃশ্য দেখিয়া শয়তান এত জোরে কাঁদিতে থাকে যে, তাহার হাড় পর্যন্ত টুটিতে থাকে আর সে নিজের দল- বলকে ধিককার দিতে থাকে যে তোদের সর্বনাশ হউক এই লোকটি কি করিয়া বাঁচিয়া গেল। তাহারা বলে ইনি মাছুম ছিলেন।


অতঃপর হজরত মালাকুল মউত সেই রুহু নিয়া যখন উপরে যান হজরত জিব্রাঈল (আঃ) সত্তর হাজার ফেরেশতা নিয়া তাঁহার এস্তেকবাল করেন ও ফেরেশতাগণ তাহাকে সুসংবাদ দান করিতে থাকে। যখন রুহুকে আরশ পর্যন্ত পৌঁছানো হয় তখন রুহ্ সেখানে পৌছিয়া ছেজদায় পড়িয়া যায়। আল্লাহ্ পাক বলেন আমার বান্দার রুহকে




في سن يتخدود وطلع قنفود - واقعا


এর মধ্যে পৌছাইয়া দাও। যখন তাহার লাশ কবরে রাখা হয় তখন নামাজ তাহার ডান দিকে আসিয়া দাঁড়াইয়া যায়। রোজা বাম দিকে হইয়া যায়। কোরআনে পাকের তেলাওয়াত ও জিকির আজকার সমূহ মাথার দিকে দাঁড়াইয়া যায় এবং জমাতের নামাজের জন্য যেই কদম চলিতেছিল উহা পায়ের দিক হইয়া যায়। আর বিপদ আপদে ছবর ও পাপ কাজ হইতে ধৈর্য্য কবরের এক দিকে দাঁড়াইয়া যায়। অতঃপর কবরের আজাব সেই কবরে ঘাড় বাহির করিয়া মুর্দা পর্যন্ত পৌছিতে চায়। কিন্তু যখন ডান দিকে আসিতে চায় তখন নামাজ বলে সরিয়া যাও, আল্লাহর কছম ! এই ব্যক্তি দুনিয়াতে বহু কষ্ট করিয়াছেন এখন একটু আরাম করিয়াছেন। বাম দিকে আসিলে রোজাও তদ্রুপ উহাকে হটাইয়া দেয়, মাথার দিক হইতে আসিলে তেলাওয়াত ও জিকির বাধা দেয়। অর্থাৎ যেই দিক হইতেই আজাব আসুক সেই দিক হইতেই সে কোন পথ খুঁজিয়া পায় না। এইভাবে আল্লাহর অলীকে চতুর্দিক হাইরে এবাদত সমূহ ঘিরিয়া রাখে। আজাব যখন ব্যর্থ হইয়া ফিরিয়া যায় তখন ছবর বলিয়া উঠে আমি এই প্রতীক্ষায় ছিলাম যে কোন দিক হইতে যদি কোন এবাদতে দুর্বলতা দেখা যায় আমি সেই দিক দিয়া বাধা দিব। তবে আল্লাহর শোকর তোমরা মিলিত ভাবে আজাবকে রোধ করিয়াছ এখন আমি আমল নামা ওজন দিবার সময় পাল্লার ধারে তাহার কাজে আসিব।


অতঃপর দুইজন ফেরেশতা মুর্দার ধারে আসে যাহাদের চক্ষু বিজলীর মত চম্‌কিতে থাকিবে। আওয়াজ মেঘের গর্জনের মত, তাহাদের দাঁত গরুর শিং-এর মত, মুখ হইতে নিশ্বাসের সহিত আগুনের ফুলকী বাহির হইতে থাকিবে। মাথার চুল পা পর্যন্ত লটকানো, উভয়ের কাঁধের দূরত্ব কয়েক দিনের পথ। দয়া দাক্ষিণ্য তাহাদের ধারে কাছেও নাই। (তবে মোমেনদের সহিত কড়া ব্যবহার করে না। কিন্তু তাহাদের ছুরতই কি কম ভয়ের কথা?) তাহাদিগকে মনকির নকীর বলা হয়। তাহাদের প্রত্যেকের হাতে এত বড় ভারী হাতুড়ি রহিয়াছে যে সমুদয় জ্বিন ও এনছান মিলিয়াও উহা উঠাইতে পারিবে না। তাহারা আসিয়া মুর্দাকে বলে বসিয়া পড়, হঠাৎ সে বসিয়া পড়ে ও কাফনের কাপড় মাথা হইতে কোমর পর্যন্ত খুলিয়া যায়। মন্‌কির নকীর প্রশ্ন করে তোমার দ্বীন কি? তোমার নবীর নাম কি? মুর্দা উত্তর দেয় আমার রব আল্লাহ জাল্লা শানুহু, আমার দ্বীন ইসলাম ও আমার নবী মোহাম্মদ (ছঃ) যিনি আখেরী নবী। ফেরেশ্তাগণ বলেন তুমি ঠিক বলিয়াছ। তারপর তাহারা কবরের চতুর্দিক খুলিয়া দেন। যাহাতে কবর খুব প্রশস্ত হইয়া যায়। তাহারা মুর্দাকে বলেন যে উপরের দিকে নজর কর। উপরে নজর উঠাইলে একটা দরজা দিয়া সে জান্নাত দেখিতে পায়। ফেরেশতারা বলেন হে আল্লাহর অলী উহা তোমার ঠিকানা। কেননা তুমি আল্লাহর এবাদত করিয়াছ। হুজুরে পাক (ছঃ) ফরমাইতেছেন ঐ আল্লাহর কছম যাহার কুদরতী হাতে আমার জান রহিয়াছে উহা দেখিয়া মুর্দা এত বেশী খুশী হইবে যে তাহার আর কোন পরবর্তন হইবে না।


 আবার ফেরেশতারা বলিবেন পায়ের দিকে দৃষ্টি পাত করুন। পায়ের দিকে দৃষ্টি করিয়াই একটি দরজা দিয়া জাহান্নামের হালত দেখিতে পাইবে। ফেরেশতাগণ বলিলেন হে আল্লাহর অলী আপনি ইহা হইতে নাজাত পাইয়াছেন, তখন সে অবর্ণনীয় খুশী লাভ করিবে। তারপর কবরের মধ্যে জান্নাতের দিক হইতে ৭৭টি দরওয়াজা খুলিয়া দেওয়া হইবে ও উহা দ্বারা বেহেশতের সুশীতল বায়ু ও খুশবু আসিতে থাকিবে এবং কেয়ামত পর্যন্তই এই হাল চলিতে থাকিবে।

👇

(ফাজায়েলে ছাদাকাত)


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url