বদকারের মৃত্যুর অবস্থা - মৃত্যু যন্ত্রণা কত কঠিন

  


 মৃত্যুযন্ত্রণা অত্যন্ত কঠিন - মৃত্যু সম্পর্কে কিছু কথা



বদকারের মৃত্যুর অবস্থা - মৃত্যু যন্ত্রণা কত কঠিন
ফাজায়েলে ছাদাকাত



মৃত্যুর আগে মানুষ কি দেখে - মৃত্যুর সময় কি হয় 

বদকারের মৃত্যু - ফাজায়েলে ছাদাকাত


হাদীছে ইহাও আসিয়াছে, বদকারের মৃত্যুর সময় আল্লাহ্ পাক মালাকুল মউতকে বলেন আমার দুশমনের নিকট যাও ও তাহার রুহ্ বাহির করিয়া আন। আমি দুনিয়াতে তাহাকে যাবতীয় সুখের সামগ্রী দান করিয়াছি কিন্তু তবু সে আমার নাফরমানী হইতে ফিরে নাই। অদ্য তাহাকে উহার শাস্তি দান করিব। মালাকুল মউত ভয়ানক মুর্তিতে বার চক্ষু বিশিষ্ট ছুরতে জাহান্নামের অগ্নির তৈয়ারী কন্টকময় লোহার গুর্জ হাতে করিয়া উপস্থিত হয়। তাহার সহিত পাঁচশত ফেরেশ্তা হইবে। প্রত্যেকের হাতে তামার টুকরা অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ও প্রজ্জ্বলিত অগ্নির কোড়া থাকিবে। মালাকুল মউত আসিয়াই তাহার উপর কোড়া মারিতে থাকে যাহার কাঁটা সমূহ মুর্দার প্রতি শিরায় প্রবেশ করিয়া যায়। অন্যান্য ফেরেশ্তাগণ তাহার মুখে ও নিতম্বে কোড়া মারিতে থাকে যদদ্বারা মুর্দা বেহুঁশ হইয়া যায়। তাহারা মুর্দার রূহকে আঙ্গুলের মাথা হইতে টানিয়া পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত আনিয়া বন্ধ করিয়া দেয় ও পিটাই করিতে থাকে। তারপর গোড়ালী হইতে হাটু পর্যন্ত ও হাটু হইতে স্থানে স্থানে বন্ধ করিয়া দেয়। অধিক কষ্ট পাওয়ার জন্যই এইরূপ করিয়া থাকে। অতঃপর ফেরেশতারা সেই তামার টুকরা এবং জাহান্নামের অঙ্গারগুলি তাহার থুত্নীর নীচে রাখিয়া দেয় ও মালাকুল মউত বলেন হে অভিশপ্ত রুহ্, বাহির হও এবং জাহান্নামের দিকে চল। ছুরায়ে ওয়াকেয়ার মধ্যে বর্ণিত আছে- “তাহারা আগুন ও উত্তপ্ত পানি ও কালো ধুঁয়ার মধ্যে হইবে যাহা না শীতল হইবে না আরামদায়ক হইবে”।



অতপর তাহার রুহ্ যখন শরীর হইতে বাহির হইবে তখন সে শরীরকে বলিবে আল্লাহ্ পাক তোমাকে শাস্তিদান করুন তুমি অন্যায় কাজে আমাকে নিয়া যাইতে ও এবাদতে অলসতা করিতে। তুমি নিজেও ধ্বংস হইয়াছ আমাকেও ধ্বংস করিয়াছ। শরীর রুহ্কে এই বলিয়াই সম্বোধন করিবে। আর জমীনের ঐ অংশ যেখানে সে গোনাহের কাজ করিত তাহাকে লানত করিতে থাকে। ওদিকে শয়তানের লঙ্কর সমূহ দৌড়াইয়া আসিয়া বড় শয়তানকে খোশ খবর শুনায় যে এক ব্যক্তিকে জাহান্নাম পর্যন্ত পৌঁছাইয়া দিয়াছি। অতঃপর যখন তাহাকে কবরে রাখা হয় কবর তাহার উপর এত সংকীর্ণ হইয়া যায় যে, তাহার পাঁজরের হাড়গুলি একে অন্যের মধ্যে ঢুকিয়া যায়। তারপর তাহাকে কাল সাপ পা ও নাক দুই দিক হইতে দংশন করিতে থাকে ও উভয় দিকের সাপ মধ্যখানে আসিয়া একত্রিত হয়। অতঃপর তাহার নিকট ভয়ঙ্কর মূর্তিতে মনকির নকীর হাজির হইয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করে তোমার রব কে? তোমার দ্বীন কি? প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তরেই সে জানিনা বলিয়া স্বীকার করে। উত্তর শুনিয়া গুর্জ দ্বারা তাহাকে ভীষণ ভাবে আঘাত করা হয় ও গুর্জের ফুলকি সমূহ কবরে ছড়াইয়া পড়ে। অতঃপর তাহাকে বলা হয় যে উপরের দিকে দেখ। উপরের দিকে চাহিয়া সে জান্নাতের দরজায় তাকাইয়া সেখানের বাগান ও সৌন্দর্য্য দেখিতে পায় ও ফেরেশতাগণ তাহাকে বলে আল্লাহর দুশমন! আল্লাহর এবাদত করিলে ইহা তোমার ঠিকানা হইত। প্রিয়নবী (ছঃ) ফরমাইলেন ঐ আল্লাহর কছম যাঁহার কুদরতী হাতে আমার জান, ইহাতে সে এত বেশী দুঃখীত হইবে যে সেইরূপ আর কখনও হয় নাই। তারপর জাহান্নামের দরওয়াজা খোলা হইবে ও ফেরেশ্তাগণ বলিবে হে আল্লাহর দুশমন ইহাই তোর ঠিকানা, কেননা তুই আল্লাহর নাফরমানী করিয়াছিলি। অতঃপর জাহান্নাম হইতে ৭৭টি দরওয়াজা তাহার কবরের দিকে খুলিয়া দেওয়া হয় যেখান হইতে কেয়ামত পর্যন্ত গরম বাতাস ও ধুয়া আসিতে থাকিবে।


মেশকাত শরীফে হজরত বরা বিন্ আজেব ও আবু হোরায়রাহ (রাঃ) হইতে আজাবে কবর সম্পর্কিত হাদীছ বর্ণিত আছে। হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, গোনাহ্গারদের জন্য কবরে ধ্বংস রহিয়াছে। তাহাদের উপর কালো সাপ নিযুক্ত করা হইবে যাহার একটি পায়ের দিক হইতে ও অপরটি মাথার দিক হইতে দংশন করিতে করিতে মধ্য ভাগে আসিয়া উভয়ে একত্রিত হইবে। ইহাই হইল আজাবে বরজখ। কোরআনে পাকে বর্ণিত আছে।


ومن ورائهم برزخ إلى يوم يبعثون. (مؤمنون عمل




এই এই কারণেই হজরত ওসমান (রাঃ) কবরের পাশ দিয়া যাইতে এত বেশী কাঁদিতেন  কারণেই হজরত ওসমান (রাঃ) কবরের পাশ দিয়া যাইতে এত বেশী কাঁদিতেন যে দাঁড়ি মোবারক ভিজিয়া যাইত। হুজুর (ছঃ) স্বয়ং বে-গুনাহ হওয়া সত্ত্বেও উম্মতের শিক্ষার জন্য আজাবে কবর হইতে পানাহ চাহিতেন। বরং বলিতেন আমার ভয় হয় তোমরা ভয়ে মুর্দাগণকে দাফন করা বন্ধ করিয়া দিবে নচেৎ দোয়া করিয়া তোমাদিগকে আজাবে কবর শুনাইয়া দিতাম।


বাস্তবিকই এই সব শাস্তি ইনছাফ মত দেওয়া হইবে। কেননা কোরআনের ভাষায় বুঝা যায় আল্লাহ্ পাক মানুষকে শুধুমাত্র এবাদতের জন্য দুনিয়াতে পাঠাইয়াছেন এবং জীবন দিয়াছেন পরীক্ষার জন্য যে আল্লাহর অফুরন্ত এহ্ছানের বদলে সে কি কাজ করে ও মৃত্যু দিয়াছেন সেই পরীক্ষার ফলাফল শুনাইবার জন্য। যেমন ছুরায়ে মুলুকে এরশাদ হইতেছে


تبارك الذي بين الملك وهو على كل شيء ترير الذي


ا خلق الموت والحيوة ليبلوكم اشكر احسن عملاء الملك على



আল্লাহ্ বড় আলী শান যাহার হাতে সারা বিশ্ব ভুবনের রাজত্ব এবং যাবতীয় বস্তুর উপর কুদরত ওয়ালা। যিনি মউত এবং হায়াত এই জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন যে, পরীক্ষা করিবেন তোমাদের মধ্যে কে অধিক ভাল আমল করে।


এই দুনিয়া যখন পরীক্ষার ক্ষেত্র আর জ্বিন ও এনছানের পয়দা করার হেকমত হইল শুধুমাত্র এবাদত । এবং দুনিয়ার লজ্জত ও আরামের সামগ্রী দান করিয়াছেন জরুরত মত নিজের প্রয়োজনে খরচ করিয়া যাহা কিছু বাঁচিবে উহা


নিজেরই ফায়েদার জন্য আল্লাহর ভাণ্ডারে জমা দিয়া দিবে। অতঃপর কতবড় দুঃখের ও পরিতাপের কথা যে আমরা উহাতে লিপ্ত হইয়া আল্লাহর আহ্কামকে ভুলিয়া যাইব এবং এ বিষয়ে চক্ষু বন্ধ করিয়া থাকিব যে আমরা কেন আসিয়াছি ও কি কাজে লাগিয়াছি? আসল আফছোছ তখন হইবে যখন দারুণ দুঃখ কষ্টে অর্জিত হাজার হাজার ধন সম্পদ নিজের উপর খরচ না করিয়া অন্যের জন্য সঞ্চয় করিয়াছি, এই সব ছাড়িয়া খালি হাতে মুহূর্তের মধ্যে এই জাহান ছাড়িয়া যাইতে হইবে। যদি আমাদের মধ্যে বিন্দুমাত্রও বিবেক বুদ্ধি থাকে তবে ক্ষণিকের জন্য নির্জনে বসিয়া এই দৃশ্যের উপর চিন্তা ফিকির করি যে, যদি এখনই মালাকুল মউত আসিয়া পড়ে তখন আমার কি উপায় হইবে? যুগ যুগের পরিশ্রমের ফলাফল ধন সম্পদের কি হাশর হইবে?

👇

ফাজায়েলে ছাদাকাত


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url