সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধের গুরুত্ব - হযরত ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ - সৎ কাজের আদেশের ফজিলত
এ যুগে যে যেখানেই বসবাস করুক না কেন মানুষকে দ্বীনের কথা বলা, দ্বীনের বিষয় শিক্ষা দেয়া বা সৎকাজের উৎসাহ প্রদান করা থেকে গা বাঁচিয়ে চলে। বহু লোকই এখনও যারা শহরে বাস করে তারা নামাযের শর্তসমূহ সম্পর্কে অজ্ঞ। শহরে যখন এরূপ অবস্থা তখন গ্রামের তো কোন প্রশ্নই উঠে না। এজনাই শহরের প্রতিটি মহল্লায় ও মসজিদে এমন একজন আলিম থাকা প্রয়োজন যে মানুষকে দ্বীনের বিষয়াদি শিক্ষা দেবে। এমনিভাবে প্রত্যেক গ্রামে ও মহল্লায়ও এ কাজের জন্য সুনির্দিষ্ট একজন আলিম থাকা প্রয়োজন। যে আলিম তার ফরজে আইন কাজগুলো সমাপ্ত করেছে এবং ফরজে কেফায়া কাজগুলো পালন করবার তার অবসর আছে। এরূপ আলিম ব্যক্তির উচিত তার আশে পাশে যারা বাস করে তাদের নিকট আসা-যাওয়া করা এবং তাদেরকে শরীয়তের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো শিক্ষা দেয়া। তার উচিত হবে নিজের খাদ্য ও রসদ নিজেরই নির্বাহ করা। যাদেরকে সে শিক্ষা দিতে যাবে তাদের খাদ্য গ্রহণ করবে না। কেননা তাদের অবশিষ্ট সব আলিমই এ ফরজে কেফায়ার দায়িত্ব থেকে রেহাই পেয়ে যাবে। নতুবা সকলেই অপরাধী হবে। আলিমগণ এজন্য অপরাধী হবে যে, তারা সর্বত্র গিয়ে শিক্ষা প্রদান করে নি এবং অজ্ঞগণ এজন্য দোষী হবে যে, তারা শিক্ষা গ্রহণে উদ্যোগ নেয়নি। যে সাধারণ ব্যক্তি নামাযের শর্তসমূহ জানে তা তার পক্ষে অপরকে শিক্ষা দেয়া ও
আল্লাহর আদেশ নিষেধ,
![]() |
| সৎ কাজে আদেশ এবং এদেশ কাজে নিষেধ |
য়াজিব। নাহলে সেও শুনাহে শরীক হবে। এটা সবাই জানে যে, কোন ব্যক্তিই মাতৃউদর থেকে শরীয়তের জ্ঞানার্জন করে জন্মগ্রহণ করে না, বরং তাদের নিকট আলিমদের উপর শরীয়তের বিধিবিধান ও রীতিনীতি পৌঁছে দেয়া ওয়াজিব হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি একটি মাসয়ালা সম্পর্কেও জ্ঞান রাখে তাকে সেই মাসয়ালার আলিম বলা হবে।
আর এ ব্যাপারেও সন্দেহ নেই যে, আলিমদের গুনাহ সাধারণের শুনাহ থেকে বেশী হবে। কারণ তাদের শিক্ষাদান করা ও মাসয়ালা বলে দেয়ার পর্যাপ্ত ক্ষমতা রয়েছে। তাদের কাজ এবং পেশাই হল এটা যে, যা কিছু হুজুরে পাক (দঃ) থেকে তাদের নিকট পৌঁছেছে তা সর্বসাধারণের নিকট পৌঁছে দেয়া। কেননা প্রকৃতপক্ষে আলিমগণই হুজুরে পাক (সঃ)এর ওয়ারিস এবং ওয়ারিস হবার তাৎপর্য ও সার্থকতাই এখানে। মানুষ যথাযথভাবে নামায পড়ে না বা নামায পড়তে আসে না। এ কারণ দেখিয়ে কোন আলিমের নিজ গৃহে বসে থাকা বা মসজিদে না যাওয়া জায়েয নয়, বরং এই অবস্থা দেখা গেলে বা জানা গেলে মানুষকে শিক্ষা দেয়া ও আদেশ নিষেধ করবার জন্য গৃহ থেকে বের হওয়া তাদের প্রতি ওয়াজিব। একইভাবে যদি আলিম জানতে পারে যে, বাজারে একটি নিন্দনীয় কাজ সর্বদা একটি নির্দিষ্ট সময়ে সংঘটিত হয় তাহলে যদি সে তা' দূর করতে সক্ষম হয় এমতক্ষেত্রে ঐ সময়ে তার গৃহে বসে থাকা এবং তা দূর করবার চেষ্টা না করা তার জন্য জায়েয নয়। যদি সে উক্ত নিন্দনীয় কাজটি দেখা থেকে এড়িয়ে থাকতে চায় তবু তার জন্য বের হওয়া কর্তব্য। কেননা সে যখন এ কারণে গৃহ থেকে বের হয়ে আসবে তখন ঐ কুকর্ম অবশ্যই কিছু না কিছু বাধাপ্রাপ্ত হবে। আর চেষ্টা করলে হয়ত সে অবশ্যই কিছুটা কুকর্ম প্রতিরোধ করতে পারবে। এ অবস্থায় ঐ কুকর্ম দেখায় তার কোন ক্ষতি হবার কথা নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোন সৎ উদ্দেশ্য ছাড়া কুকর্ম দেখলে তখনই তা ক্ষতির কারণ হয়।
মোটকথা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য হল, ফরজ বা অবশ্য কর্তব্যগুলো অব্যাহতভাবে পালন করে এবং হারাম বা কঠোর নিষিদ্ধ কাজগুলো পরিত্যাগ করে সর্বপ্রথম আত্মসংশোধন করা। এভাবে আত্মসংশোধনের পর প্রথম নিজ গৃহের লোকদের এ বিষয় যথাযথভাবে শিক্ষাদান করবে। তারপর পাড়া প্রতিবেশীদেরকে, তারপর মহল্লাবাসীদেরকে এবং দূরবর্তী এলাকার লোকদেরকে শিক্ষাদান করবে। যে এলাকায় একটিমাত্র লোকও কোন দ্বীনী ফরজ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকবে এবং কোন আলিমের নিজে গিয়ে অথবা অন্যের মাধ্যমে তাকে শিক্ষা দেয়ার সাধ্য ও শক্তি থাকলে তখন এ দায়িত্ব থেকে কোন আলিমই রেহাই পাবে না, যদি সে এ দায়িত্ব পালন না করে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যারা দ্বীনধর্মের বিষয়ে চিন্তাশীল, তাদের জন্য এ কাজটি যথেষ্ট জরুরী।
👇
হযরত ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)
এহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন
.png)