পরহেজগারিতা অবলম্বন করা - তাকওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
আদর্শ সমাজ গঠনে তাকওয়ার ভূমিকা - তাকওয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত
![]() |
| পরহেজগারী অবলম্বন করা। |
পরহেজগারী অবলম্বন করা - হযরত শেখ আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)
হযরত শেখ আবদুল কাদের জিলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ফরমাইয়াছেন, তুমি পরহেজগারী অবলম্বন কর। না হয় তোমার ঘাড়ে এমনিভাবে ধ্বংস অপরিহার্য হইয়া যাইবে যে কখনও তুমি এই ধ্বংস হইতে নাজাত পাইবে না। কিন্তু যদি আল্লাহর বিশেষ রহমত তোমাকে রক্ষা করে ভিন্ন কথা।
হাদীছে বর্ণিত আছে যে, দ্বীনের বুনিয়াদ হইতেছে পরহেজগারী আর দ্বীনের ধ্বংস হইতেছে লোভ। যেই ব্যক্তি নিষিদ্ধ চারণভূমির আশে পাশে ঘুরাফেরা করিবে সে ঐ চারণভূমির ভিতরে ঢুকিয়া পড়িবার আশংকা আছে। যেমনিভাবে কোন পশু শস্য ক্ষেতের আশে পাশে চড়িতে থাকিলে সে ঐ শস্যের মধ্যে মুখ বাড়াইবার আশংকা ও ভয় থাকে। তাহার মুখ হইতে ফসল বাঁচাইয়া রাখা সম্ভব হয় না।
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) ফরমাইয়াছেন, আমরা হালাল বস্তুর দশভাগের নয় ভাগই এই ভয়ে বর্জন করিতাম যে আমরা হারামের মধ্যে পতিত হইয়া যাই কিনা?
হজরত আবু বকর ছিদ্দিক (রাযিঃ) হইতে বর্ণিত আছে, তিনি ফরমাইয়াছেন, আমরা গুনাহের মধ্যে পতিত হওয়ার ভয়ে মোবাহ বা বৈধ কাজের শতকরা সত্তরটি দরজা বর্জন করিতাম। তাঁহারা এইরূপ করিয়াছেন। হযরত রাছুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীছের প্রতি আমল করিয়া হারামের কাছাকাছি পৌছিয়া যাওয়ার ভয়ে। হযরত রাছুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেনঃ “সাবধান! প্রত্যেক বাদশাহের নির্দিষ্ট চারণভূমি আছে। আর আল্লাহর চারণভূমি হইতেছে নিষিদ্ধ বিষয়বস্তু সমূহ।” যেই ব্যক্তি চারণভূমির আশে পাশে ঘুরাফেরা করে সে উহার ভিতরে ঢুকিয়া যাওয়া বিচিত্র নহে। যেই ব্যক্তি বাদশাহের দুর্গের ভিতরে প্রবেশ করিবে সে তখন প্রথম দরজা অতিক্রম করিবে তারপর দ্বিতীয় দরজা অতিক্রম করিবে। তারপর তৃতীয় দরজা, এমনকি শেষ পর্যন্ত বাদশাহের সিঁড়ির নিকট পৌঁছিয়া যাইবে। তবে সে ঐ ব্যক্তি হইতে ভাল যেই ব্যক্তি প্রথম দরজার নিকট দাঁড়াইয়া রহিয়াছে। যেই দরজাটি ময়দানের সংলগ্ন। কেননা যদি তাহার উপর দরজা বন্ধ করিয়া দেওয়া হয় তাহা হইলে তৃতীয় দরজা বন্ধ করা হইবে। ইহাতে তাহার কোন ক্ষতি হইবে না। অথচ সে উপরে বর্ণিত প্রাসাদের দরজা সমূহের পিছনে আছে। তার পিছনে রহিয়াছে বাদশাহের ধন-রত্ন ও সৈন্যদল।
কিন্তু যখন প্রথম দরজার নিকট থাকিবে, আর সেই দরজা তাহার উপর বন্ধ করিয়া দেওয়া হয়।
তখন সে ময়দানের মধ্যে একাকী থাকিয়া যাইবে, তাহাকে বাঘ এবং শত্রু আক্রমণ করিবে। তখন সে ধ্বংস হইয়া যাইবে। অনুরূপভাবে যেই ব্যক্তি শক্ত আদেশের কাজের অর্থাৎ আজীমতের পথে চলিবে এবং উহাকে অপরিহার্য করিয়া লইবে যদি তাহার নিকট হইতে আল্লাহর তৌফিক ও সুদৃষ্টির সাহায্য দূরে সরাইয়া রাখা হয় এবং সেই আজীমত তাহার নিকট হইতে আলাদা হইয়া যায় তখন সে অন্ততঃ রোখছত অর্থাৎ অনুমতি দেওয়া বিষয়ের মধ্যেই থাকিয়া যাইবে। শরীয়ত হইতে বাহির হইবে না, যদি তাহার মৃত্যু আসে তখন আল্লাহর এবাদত ও বন্দেগীর উপরই তাহার মৃত্যু হইবে। তাহার জন্য ভাল আমলের সাক্ষ্য দেওয়া হইবে।
আর যেই ব্যক্তি রোখছাতের নিকট অর্থাৎ অনুমতি দেওয়ার বিষয়ের নিকট অবস্থান করিবে এবং আজীমত অর্থাৎ শক্ত ও দৃঢ় আদেশ পালনের পথে মোটেই অগ্রসর না হয় এমতাবস্থায় যদি তাহার নিকট হইতে তৌফিক দূর করিয়া নেওয়া হয় তখন যাবতীয় সাহায্য তাহার নিকট হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া যায়। ফলে তাহার উপর খাহেশ ও নাফছের প্রবৃত্তি গালেব হইয়া যায়। যাহার কারণে সে হারাম ভক্ষণ করে এবং শরীয়ত হইতে বাহির হইয়া যায়। তখন সে আল্লাহর দুশমন গোমরাহ শয়তানের দলভূক্ত হইয়া যায়। এমতাবস্থায় যদি তাহার মৃত্যু আসিয়া যায় তওবা করিবার পূর্বে, তাহা হইলে সে ধ্বংস হইয়া যাইবে। কিন্তু যদি আল্লাহ্ তা'আলা তাহাকে নিজ রহমত ও অনুগ্রহের দ্বারা ঢাকিয়া নেন ভিন্ন কথা। অতএব রোখছতের নিকট দণ্ডায়মান হওয়া অত্যন্ত ভয়ের বিষয়। পূর্ণ ছালামতী ও শান্তি এবং নিরাপত্তা হইতেছে আজীমতের নিকট দণ্ডায়মান থাকা।
👇
ফতুহুল গয়ব
