আল্লাহ্ তায়ালার মহব্বতের মধ্যে কাহাকেও শরীক করিও না - হযরত শেখ আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)
![]() |
| বড় পীরের বাণী |
আল্লাহ্ তায়ালার মহব্বতের মধ্যে কাহাকেও শরীক করিও না
হযরত শেখ আবদুল কাদের জিলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ফরমাইয়াছেন, তুমি এই কথা খুব বেশী পরিমাণে বলিয়া থাক যে, আমি যাহাকে ভালবাসি আমার সেই মহব্বত তাহার জন্য স্থায়ী হয় না। আমাদের মধ্যে বাধা সৃষ্টি হইয়া যায়। সেই বাধা হয়তো সে গায়েব হইয়া যাওয়ার কারণে হয়, না হয় তাহার মৃত্যুতে হয় অথবা শত্রুতা হওয়ার কারণে হয় অথবা বিভিন্ন প্রকারের সম্পদের কারণে। হয়তো সম্পদ ধ্বংস হওয়ার কারণে এবং আমার হাত হইতে চলিয়া যাওয়ার কারণে হয়। এইভাবে আমার মধ্যে ও আমার বন্ধুর মধ্যে অন্তরায় সৃষ্টি হইয়া যায়।
হে আল্লাহর প্রিয় বান্দা! তুমি কি জান না যে, তাঁহার দ্বারা নেয়ামত ও পুরস্কার প্রাপ্ত হইয়াছ, তাঁহার নিকট মনজুর ও গৃহিত হইয়াছ এবং তাঁহার জন্য ও তাঁহার কাজের উপর তুমি সকলের গায়রত ও ঈর্ষার পাত্র হইয়াছ। তুমি কি জান না যে আল্লাহ তা'আলা অত্যন্ত গায়রতমান্দ অর্থাৎ আত্মবোধসম্পন্ন। তোমাকে তাঁহার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন। আর তুমি গায়রের অর্থাৎ আল্লাহকে ছাড়িয়া অন্যের কছদ করিতেছ। অন্যের সঙ্গে মহব্বত স্থাপন করিতেছ। তুমি কি আল্লাহর বাণী শ্রবণ কর নাই, তিনি যে এরশাদ করিয়াছেনঃ “আল্লাহ তাহাদিগকে ভালবাসেন এবং তাহারাও আল্লাহকে ভালবাসে।” তিনি আরও এরশাদ করিয়াছেনঃ "আমি জ্বিন ও ইনছানকে আমার ইবাদত করা ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য ও কাজের জন্য সৃষ্টি করি নাই।” তুমি কি হযরত রাছুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী শ্রবণ কর নাই।
তিনি এরশাদ করিয়াছেনঃ "যখন আল্লাহ তা'আলা কোন বান্দাকে ভালবাসেন তখন তাহাকে পরীক্ষামূলক বিপদগ্রস্ত করেন। যদি সে ধৈর্য ধারণ করে তবে তিনি তাহাকে নিজের হেফাজতে রাখেন। তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করা হইল হে আল্লাহর রাছুল! ইকতানা (অর্থাৎ তাহার হেফাজত করেন) ইহার অর্থ কি? উত্তরে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইলেনঃ ইহার অর্থ এই যে, আল্লাহ পাক তাহার ধনসম্পদ ও সন্তান কিছুই রাখেন না।”
কারণ যখন তাহার ধনসম্পদ ও সন্তান থাকিবে তখন সে এই দুইটিকে মহব্বত করিবে। তখন তাহার প্রভুর জন্য মহব্বত ভাগ হইয়া কমিয়া যাইবে এবং অংশ বিশেষ হইয়া যাইবে। তখন আল্লাহ ও অপরের মধ্যে তাহার মহব্বত মুশতারেক বা অংশিদার হইয়া যাইবে। অথচ আল্লাহ তা'আলা কোন শরীক কবুল করেন না বা অংশীদার মানিয়া নিবেন না। তিনি অত্যন্ত গায়রতমান্দ বা আত্মবোধসম্পন্ন। প্রত্যেক বস্তুর উপর প্রভাবশালী, প্রত্যেক বস্তুর উপর তিনি বিজয়ী। তাই তিনি তাঁহার শরীককে ধ্বংস করিয়া দিবেন এবং তাহাকে নিপাত করিয়া দিবেন। যেন বান্দার কল্ব আল্লাহর জন্য শরীক হইতে মুক্ত হইয়া খালেছ ও খাটি হইয়া যায়। তখনই আল্লাহর বাণীর সত্যতা বাস্তবায়িত হইবে যে, তিনি তাহাদিগকে ভালবাসেন এবং তাহারাও তাঁহাকে ভালবাসেন।
শেষ পর্যন্ত যখন বান্দার অন্তকরণ শরীক হইতে এবং তাহার পরিবার, ধনসম্পদ, সন্তানাদি, স্বাদের বিষয়বস্তু ও খাহেশাহের মূর্তি হইতে এবং রাজত্বী, সর্দারী, কারামত, হালাত ও মর্যাদা, মোকাম, জান্নাত, উচ্চমর্যাদা ও নৈকট্য ইত্যাদির তলব হইতে পাক পবিত্র হইবে, তারপর তাহার অন্তরে তাহার কোন ইচ্ছা আকাংক্ষা বাকী থাকিবে না। বরং সে একটি ছিদ্রযুক্ত পাত্রের ন্যায় হইয়া যাইবে যাহার মধ্যে কোন প্রকার তরল পদার্থ বাকী থাকে না। কেননা উহা আল্লাহর কাজের দ্বারা ভাঙ্গিয়া গিয়াছে। অনুরূপভাবে সেই বান্দার অন্তরে যখন কোন ইচ্ছা জাগিয়া উঠে তখন আল্লাহর কার্য সেই ইচ্ছাকে ভাঙ্গিয়া দেয় এবং উহা পরিবর্তন করিয়া দেয়। আল্লাহর গায়রত উহাকে চুর্ণবিচূর্ণ করিয়া দেয়। তারপর সেই বান্দার কলবের চতুষ্পার্শে আল্লাহর মাহাত্ম্য, তাঁহার প্রতিপত্তি ও ভয়াবহতার প্রাচীর কায়েম করিয়া দেন এবং ইহার অদূরে আল্লাহর মাহাত্ম্য ও শানশওকতের পরিখা খনন করা হয়। ফলে কোন বস্তুর ইচ্ছা তাহার অন্তরে পৌছিতে পারে না। তখন মাল-আসবার, সন্তান-সন্ততি, পরিবার-পরিজন, বন্ধু বান্ধব, কারামত, হেকমত আদেশ দানের ভাষা তাহার কোন ক্ষতি করিতে পারে না। কেননা এই সকল বস্তু তাহার কল্বের বাহিরে থাকে।
তখন আল্লাহ তা'আলার আত্মবোধের আঘাত হইতে বাঁচিয়া যায়। বরং এই সব বিষয় আল্লাহর পক্ষ হইতে তাঁহার প্রিয় বান্দার জন্য উপহার ও করুণা স্বরূপ এবং নেয়ামত ও রিজিক স্বরূপ দেওয়া হয় এবং সেই বান্দার নিকট আগমনকারীদের উপকারের জন্য দিয়া থাকেন। তখন তাহার দ্বারা অন্যান্য বান্দাগণও সম্মানিত হয়, তাহাদের প্রতি রহমত করা হয়, তাহাদিগকে হেফাজত করা হয়। এইসব কিছু শুধু ঐ প্রিয় বান্দা আল্লাহর নিকট সম্মানিত হওয়ার কারণে। কাজেই সেই প্রিয় বান্দা তাহাদের নেগাহবান, তাহাদের অভিভাবক, তাহাদের আশ্রয়স্থল, তাহাদের নেগাহবান ও ইহ পরকালের সুপারিশগার হিসাবে মর্যাদা লাভ করিয়া থাকে।
👇
(ফতুহুল গয়ব)
