আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় - আল্লাহর নৈকট্য অর্জন

আল্লাহর নৈকট্য লাভের সহজ মাধ্যম 

 
আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় - আল্লাহর নৈকট্য অর্জন
আল্লাহ্ তায়ালার নৈকট্য লাভ

আল্লাহর নৈকট্য লাভের তরীকা - হযরত শেখ আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)



হযরত শেখ আবদুল কাদের জিলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ফরমাইয়াছেন, তোমার আধ্যাত্মিক ব্যাপার দুই প্রকার অবস্থা হইতে মুক্ত নহে। হয়তো আল্লাহর নৈকট্য হইতে দূরে থাকিবে অথবা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করিয়া আল্লাহ পর্যন্ত পৌছিবে। তবে যদি তুমি আল্লাহ হইতে দূরে থাক তাহা হইলে আল্লাহর নৈকট্যের পুরাপুরি অংশ লাভ করা হইতে, আধ্যাত্মিক নেয়ামত ও স্থায়ী সম্মান, মহান সামগ্রী শান্তি ও ইহকালীন এবং পরকালীন ধন সম্পদ ও স্বাচ্ছন্দ্য হইতে তুমি বসিয়া থাকার ও অবহেলা করার কারণ কি? তুমি উঠ এবং তোমার দুই ডানা দ্বারা সেই দিকে উড়িয়া যাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি কর। তোমার দুই ডানার একটি ডানা হইতেছে মজা, হারাম, মোবাহ ও আরামের লোভ লালসা ত্যাগ করা এবং দ্বিতীয় পাখা হইতেছে দুঃখ কষ্ট সহ্য করা এবং কঠিন ও দৃঢ়ভাবে আদিষ্ট কাজে লিপ্ত হওয়া। মাখলুক ও খাহেশাত এবং দুনিয়া আখেরাতের যাবতীয় ইচ্ছা আকাংক্ষা হইতে বাহির হওয়া। যেন তুমি আল্লাহর সঙ্গে মিলিয়া তাঁহার নৈকট্য লাভ করতঃ জয়লাভ করিতে পার।


তখন তুমি তোমার যাবতীয় আশা আকাংক্ষা লাভ করিতে পারিবে এবং তোমার বড় কারামত ও মহা ইজ্জত হাসিল হইবে। যখন তুমি ঐ সকল লোকের অন্তর্ভুক্ত হইয়া যাইবে যাহারা আল্লাহ পর্যন্ত পৌছিয়া গিয়াছে যাহাদিগকে আল্লাহর খাছ করুণায় পাইয়াছে এবং আল্লাহর সুদৃষ্টির আওতাভুক্ত হইয়াছে, আল্লাহর প্রেম ও মহব্বত যাহাদিগকে টানিয়া লইয়াছে এবং যাহাদের নিকট আল্লাহর খাছ রহমত ও অনুগ্রহ পৌছিয়াছে, যখন তুমি ঐ সকল লোকের মধ্যে একজন হইয়া যাইবে তখন তুমি সুন্দর আদবের ব্যবহার করিও। সুন্দরভাবে আদব রক্ষা করিও এবং তুমি যেই মহান উচ্চ মর্যাদায় থাকিবে উহাতে ধোকায় পড়িয়া খেদমতে ত্রুটি করিও না এবং তোমার বুনিয়াদী নাফরমানী, মুর্খতা, জুলুম ও তাড়াহুড়া করার স্বভাবের দিকে ফিরিয়া যাইও না। যথা- কোরআনে পাকে আল্লাহ পাক এরশাদ করিয়াছেনঃ “যেই আমানতকে মানুষ বহন করিয়া লইল নিশ্চয় সে অত্যাচারী মুর্খ বা অজ্ঞ এবং মানুষের স্বভাবই হইতেছে তাড়াহুড়া করা।”


তোমার অন্তরকে ঐ সকল বিষয় হইতে রক্ষা কর যাহা তুমি বর্জন করিয়াছ এবং তাহা হইতেছে মাখলুক, খাহেশ, স্বীয় ইচ্ছা এরাদা, নিজ এখতেয়ারে কাজ করা। তদবীর করা, অধৈর্য হওয়া, অনুকূলে না থাকা, বিপদ আসিবার সময় উহার প্রতি সন্তুষ্ট না থাকা ইত্যাদি স্বভাব যাহা বর্জন করিয়া আসিয়াছ ঐ সব কিছুর দিকে তোমার অন্তর ঝুঁকিয়া যাওয়া হইতে অন্তরকে রক্ষা কর যেন উহার কোনটির দিকেই অন্তরের ঝুঁকি না হয়। বরং তুমি নিজকে আল্লাহর সামনে ফেলিয়া রাখ যেমিনভাবে খেলোয়াড়ের সামনে বল পড়িয়া থাকে। সে তাহার ইচ্ছানুযায়ী সেই বলটিকে এদিক সেদিক ফিরায় এবং যেমনিভাবে গোসল দাতার সামনে মাইয়েত থাকে তুমিও তদ্রুপ মৃত ব্যক্তির ন্যায় পড়িয়া থাক এবং যেমনিভাবে মাতা ও ধাত্রীর কোলে দুগ্ধপোষ্য শিশু থাকে। আল্লাহ ছাড়া অন্য সকল কিছু হইতে তুমি অন্ধ হইয়া যাও। আল্লাহ ছাড়া আর কাহারও অস্তিত্ব তুমি যেন না দেখ এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাহারও নিকট হইতে ক্ষতি, লাভ ও দানের আশা রাখিও না। কেহ তোমাকে বাধা দিতে পারে এমন ধারণা যেন তোমার না থাকে।


তোমার বিপদ ও মছীবতের সময় মাখলুক ও আসবাবকে আল্লাহর চাবুকের ন্যায় মনে কর। তিনি তোমাকে সেই চাবুক দ্বারা প্রহার করিতেছেন। আর যখন তোমার উপর স্বচ্ছলতা ও নেয়ামত আসিবে তখন উহাকে আল্লাহর এহছান মনে কর। তিনি তোমার প্রতি নেয়ামত দান করিতেছেন।

👇

হযরত শেখ আবদুল কাদের জিলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি 

(ফতুহুল গয়ব)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url