শিক্ষনীয় ইসলামিক গল্প - হযরত ইমাম গাজ্জালী রহঃ
ইমাম গাজ্জালীর একটি অসাধারণ শিক্ষীয় গল্প
![]() |
| শিক্ষনীয় ইলামিক কাহিনী। |
শিক্ষনীয় গল্প ও শিক্ষামূলক ঘটনা - শিক্ষনীয় ইসলামিক কাহিনী
খলিফা আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান এবং এক বুজুর্গ ব্যক্তির ঘটনা
আহমদ ইবনে ইব্রাহীম মুকরী (রহঃ) বলেন, বিখ্যাত বুযর্গ আবুল হাসান ছাওরী (রহঃ) এর অভ্যাস ছিল, তিনি কোন নিন্দনীয় বিষয় দেখলে প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও তা’ মিটিয়ে দিতেন। একদা তিনি মাশারায়ে মাখামীন নামক নদীতে অজু করছিলেন। এমন সময় তিনি নদীর বুকে একটি নৌকা দেখতে পেলেন, যার মধ্যে ত্রিশটি মটকা ছিল। প্রত্যেকটি মটকার গায়ে ‘লুত্বফ' শব্দটি লিখিত ছিল। তিনি এ শব্দটির অর্থ বুঝতে পারলেন না, কেননা পণ্য বা পারিবারিক ব্যবহার্য কোন বস্তুর নাম 'লুত্বফ' আছে বলে তার জানা ছিল না। তাই তিনি নৌকার মাঝিকে জিজ্ঞেস করলেন, এ মটকাগুলোর মধ্যে কি আছে? মাঝি বলল, তাতে আপনার কি প্রয়োজন? মাঝির কথা শুনে ছাওরী (রহঃ) এর কৌতূহল আরও বেড়ে গেল। তিনি বললেন, ওগুলোতে কি আছে তা আমার জানতে ইচ্ছে হচ্ছে। মাঝি বলল, সাহেব! আপনি সুফী-দরবেশ শ্রেণীর লোক। এটা জেনে আপনার কি হবে? এগুলোর মধ্যে খলীফা মুতাযিদ বিল্লাহর শরাব রয়েছে। ছাওরী (রহঃ) চমকিত হয়ে বললেন, শরাব। মাঝি বলল, হাঁ শরাব। তখন ছাওরী (রহঃ) মাঝিকে বললেন, তোমার নৌকায় ঐ যে মুদগরটি দেখা যাচ্ছে ঐটি আমার হাতে দাও। তার কথায় মাঝি অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে এক মাল্লাকে বলল, দাও দেখি মুদগরটি তার হাতে দেখা যাক সে কি করে। মুদগর হাতে পেয়েই তিনি নৌকায় আরোহণ করে এক একটি করে মটকা ভেঙ্গে চুরমার করতে লাগলেন। অবশেষে একটি মটকা বাকী রেখে তিনি সবগুলো ভেঙ্গে দিলেন। মাঝির ফরিয়াদে তিনি এতটুকু কর্ণপাত করলেন না। স্থানীয় প্রশাসক ইউনুস ইবনে আকলার কাছে খবর পৌঁছে গেল। তিনি যথাসত্বর ঘটনাস্থলে এসে ছাওরী (রহঃ)কে গ্রেপ্তার করে খলীফা মু'তাযিদ বিল্লাহর দরবারে পাঠিয়ে দিলেন।খলীফা মু'তাযিদ বিল্লাহ এমন প্রকৃতির লোক ছিল যে, তার তরবারী আগে কাজ করত। মুখ থেকে কথা বেরুত তার পরে। তাই সবারই বিশ্বাস ছিল যে, খলীফা মু'তাযিদ বিল্লাহর তরবারী থেকে ছাওরী (রহঃ) এর কোনক্রমেই নিস্তার নেই।
আবুল হাসান ছাওরী (রহঃ) বলেন, আমাকে যখন খলীফার দরবারে উপস্থিত করা হল, তখন সে তার কুরসীতে উপবিষ্ট ছিল এবং তার হস্তে ছিল একটি বেত্রদণ্ড। আমাকে দেখেই খলীফা বলে উঠল, তুমি কে? আমি বললাম, আমি জনৈক সৎকাজে আদেশকারী এবং অসৎকাজে নিষেধকারী। খলীফা বলল, তোমাকে এ পদে কে নিয়োগ করেছে। আমি বললাম, যিনি তোমাকে খলীফা পদ দান করেছেন। আমার কথা শুনে খলীফা কিছুক্ষণ মস্তক অবনত করে রাখল। তারপর মস্তক উত্তোলন করে বলল, তুমি এরূপ কান্ড কেন করলে? আমি বললাম, তোমার অবস্থার প্রতি দয়াবশে আমি ভাবলাম যে, তোমার এ অনিষ্ট যদি আমি দূর করতে পারি তবে তাতে ত্রুটি করা আমার জন্য ঠিক হবে না। আমার একথা শুনার পর খলীফা মস্তক অবনত করে মনে হয় আমার কথা সে হৃদয়ঙ্গম করতে লাগল। তারপর পুনরায় মস্তক উত্তোলন করে সে বলল, মটকাগুলোর মধ্যে একটি মটকা অক্ষত থাকল কিরূপে? আমি বললাম, খলীফা! অনুমতি পেলে আমি তার কারণটি বর্ণনা করব। খলীফা বলল, অনুমতি আছে, বর্ণনা কর। আমি বললাম, আমীরুল মু'মিনীন! আমি যখন মটকাগুলোর দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম তখন আমার অন্তর আল্লাহর বলে বলীয়ান ছিল। তাই আমি এগুলো ভেঙ্গে দেয়ার অসম সাহস করতে পেরেছি। কোন মানুষের ভয়ভীতি আমার মধ্যে বিন্দুমাত্র ছিল না। সবগুলো মটকা ভেঙ্গে ফেলার সময়েই আমার অবস্থা এরূপ ছিল; কিন্তু শেষ মটকাটি ভাঙ্গতে গিয়ে আমার মধ্যে খলীফার এতগুলো মটকা ভেঙ্গে দিতে পারায় একটা অহঙ্কার ও আস্ফালন মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। আর তখনই আমি ঐ মটকাটি ভেঙ্গে ফেলা থেকে নিজের হাত গুটিয়ে নিলাম। যদি সে সময়ও আমার অন্তর মধ্যে পূর্বের সেই উদ্দীপনা এবং নিরহঙ্কার অবস্থা বিদ্যমান থাকত তাহলে শুধু ঐ একটি মটকা কেন সারা দুনিয়া মটকায় পরিপূর্ণ থাকলেও আমি সেগুলোকে একটি একটি করে ভেঙ্গে ফেলতে পারতাম। আমার মনে কোন কিছুরই পরোয়া হত না। খলীফা বলল, যাও, আমার তরফ থেকে তুমি অবাধ ক্ষমতা পেলে, যে কোন মন্দ ও নিন্দনীয় বিষয় দেখতে পাও তা তুমি নির্বিঘ্নে নষ্ট করে দিও। খলীফার কথা শুনে আমি বললাম, এখন তোমার আদেশ শুনে এরূপ বিনষ্ট করাকে আমি ভাল মনে করছি না। কেননা এতদিন পর্যন্ত আমি স্বয়ং আল্লাহতায়ালার তরফ থেকে বিনষ্ট করতাম। এখন বিনষ্ট করা হলে তোমার নির্দেশের অধীনে বিনষ্ট করতে হবে। খলীফা বলল, তোমার ইচ্ছা কি তুমি বলতে পার? আমি বললাম, আমীরুল মু'মিনীন! আমি চাই তোমার এখান থেকে নির্বিঘ্নে প্রত্যাবর্তন করতে। খলীফা তাই করল অর্থাৎ তাঁকে নির্বিবাদে দরবার থেকে বিদায় করে দিল। অতঃপর আবুল হাসান ছাওরী (রহঃ) বছরায় চলে এলেন, আবার হয়ত কোন কারণবশতঃ যদি তাকে খলীফার দরবারে যেতে হয় এই ভয়ে অধিকাংশ সময় তিনি বছরায়ই অতিবাহিত করেন।
কথিত আছে যে, খলীফা মু'তাযিদ বিল্লাহর মৃত্যুর পর তিনি বাগদাদে ফিরে গিয়েছিলেন।
