অদৃষ্টে তুষ্ট থাকা - বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)
বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর অমর বাণী - বড় পীরের বাণী
![]() |
| অদৃষ্টে তুষ্ট থাকা |
অদৃষ্টে তুষ্ট থাকা
হযরত শেখ আবদুল কাদের জিলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ফরমাইয়াছেন, তোমরা আল্লাহর ফায়সালার অর্থাৎ তকদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকার অথবা মাওলার কাজের মধ্যে বিলীন হওয়ার তৌফীক বা ক্ষমতা লাভের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করিও। কারণ ইহাতেই বিরাট শান্তি এবং ইহাই হইতেছে দুনিয়ার মধ্যে অতুলনীয় উচ্চ বেহেশত এবং ইহাই হইতেছে মুমেন বান্দার জন্য আল্লাহর বড় দরজা এবং আল্লাহর মহব্বতের উপায়। আল্লাহ তা'আলা যাহাকে ভালবাসেন তাহাকে তিনি দুনিয়া ও আখেরাতে আজাব দিবেন না।
ইহার মধ্যেই নিহিত রহিয়াছে আল্লাহর সহিত নৈকট্য লাভ ও তাঁহার নিকট পৌঁছিবার এবং তাঁহার প্রেম লাভ করিবার উপায়।
আর তোমরা আল্লাহর নিকট ভোগ বিলাসের বা রিজিকের অংশ বা হিস্সা তলব করার মধ্যে লিপ্ত হইও না। কেননা উহা হয়তো এমন হইবে যাহা তোমাদের জন্য বন্টন করা হয় নাই অথবা তোমাদের ভাগ্যে বন্টন করা হইয়াছে। যদি তোমাদের ভাগ্যে বন্টন করা না হইয়া থাকে তাহা হইলে উহার অন্বেষণে লিপ্ত হওয়া আহমকী, ফেরআউনী ও মুর্খতা মাত্র। আর এই অনর্থক
অন্বেষণের পরিশ্রম তোমাদের জন্য কঠোর শাস্তি। যথা বলা হইয়াছে, মানুষের জন্য কঠোর শাস্তি হইতেছে এমন জিনিষ তলব করা যাহা তাহার জন্য ভাগ্যে নির্ধারণ করা হয় নাই।
আর যদি সেই জিনিষ তোমাদের জন্য বন্টন করা হইয়া থাকে তাহা হইলে উহার তলবের মধ্যে লিপ্ত হওয়ার অর্থ লোভ লিপসা করা এবং আল্লাহর এবাদত ও মহব্বতের মধ্যে শরীক করা। কেননা আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর মধ্যে লিপ্ত হওয়ার অর্থই হইতেছে শিরক। আর যেই ব্যক্তি আল্লাহর এবাদতের সঙ্গে তাহার নাফছের অংশ ও স্বাদ ভোগের অন্বেষণকারী হয় সে তাহার মহব্বত ও বেলায়াতের মধ্যে সত্য নহে। অতএব যেই ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে অন্যকেও পছন্ন করে বা গ্রহণ করে সে বড় মিথ্যুক। আমলের বিনিময় তলবকারী মুখলেছ নহে। মুখলেছ শুধু ঐ ব্যক্তি যেই ব্যক্তি আল্লাহর এবাদত করে আল্লাহর রবুবিয়াত ও মিলকিয়াতের হক আদায় করার উদ্দেশ্যে। কেননা আল্লাহর জন্যই বান্দার যাবতীয় চলাফেরা, তাহার যাবতীয় উপার্জন ও কাজ কর্ম। সবকিছু আল্লাহর জন্য। স্বয়ং বান্দা ও তাহার মালিকানাধীন যাবতীয় বিষয়বস্তু তাহার মাওলার জন্য।
কেন আল্লাহর জন্য হইবে না অথচ আমি একাধিক স্থানে বর্ণনা করিয়াছি যে, যাবতীয় এবাদত আল্লাহর পক্ষ হইতে বান্দার জন্য নেয়ামত ও তাঁহার অনুগ্রহ মাত্র। কেননা আল্লাহ তা'আলা বান্দাকে এবাদাতের তৌফীক দান করিয়াছেন এবং বান্দাকে এবাদতের জন্য ক্ষমতা ও শক্তি দান করিয়াছেন। অতএব আল্লাহর নিকট এবাদত্তের বিনিময় চাওয়া হইতে তাঁহার শুকরিয়া আদায় করার মধ্যে লিপ্ত হওয়াই উত্তম।
তারপর তুমি কি করিয়া অংশ তলব করার মধ্যে লিপ্ত হইবে অথচ তুমি বহুলোককে দেখিতেছ যে, যখনই তাহাদের নিকট সংসারের ভোগ বিলাসের বিষয়বস্তু প্রচুর পরিমাণে আসে এবং উহা পর পর আসিতেই থাকে। আর একাধারে তাহাদের স্বাদের বিষয়াদি ও নেয়ামত এবং অদৃষ্টে লিখা হিস্সা সমূহ আসিতেই থাকে তখন তাহাদের প্রভুর উপর তাহাদের অসন্তুষ্টি বাড়িতেই থাকে এবং তাহাদের দুঃখ কষ্ট আরও বেশী প্রকাশ করিতে থাকে। আল্লাহর নেয়ামতের অকৃতজ্ঞতা বৃদ্ধি পায় এবং তাহাদের দুঃখ ও অশান্তি বাড়িয়া যায়। আর তাহাদের ভাগ্যে যাহা লিখা হয় নাই এমন অংশের দিকে তাহাদের মুহতাজী ও লোভ আরও বাড়িয়া যায়। তাহাদের নিকট যেই অংশ আছে উহা তাহাদের চোখে অত্যন্ত নগণ্য, হেয় ও মন্দ হইয়া যায়।
বড় পীর হুজুরের আরো কিছু কথাঃ
👇
"স্বপ্নে বড়পীর সাহেব ও অভিশপ্ত শয়তানের সাক্ষাৎকার"
আর অপরের ভাগ্যে নির্ধারিত ও অপরকে প্রদত্ত অংশ তাহাদের অন্তরে ও চোখে খুব মহান ও সুন্দর দেখে। তখন উহা অন্বেষণ করিতে আরম্ভ করে। অথচ উহা তাহাদের ভাগ্যে বন্টন করা হয় নাই। ফলে উহার পিছনে তাহাদের জীবন ও শক্তি সব কিছুই শেষ হইয়া যায়। তাহাদের বার্ধক্য আসিয়া যায়। তাহাদের ধনসম্পদ সবকিছুই শেষ হইয়া যায়। তাহাদের শরীর ক্লান্ত হইয়া যায়। তাহাদের কপালে ঘাম আসিয়া যায় এবং পরের ধন তালাশ করিতে যাইয়া বড় বড় গুনাহে লিপ্ত হওয়ার কারণে এবং বহু অপরাধ করার কারণে তাহাদের চেহারা কালো হইয়া যায়। আর তাহারা তাহাদের প্রভুর আদেশ অমান্য করার কারণে তাহাদের চেহারা কুৎসিত হইয়া যায়। তারপরও তাহারা ঐ সব ধন-রত্ন লাভ করিতে পারে না যাহার জন্য জীবন শেষ করিল। কেননা উহা অন্যের জন্য বরাদ্দ করা হইয়াছে। ফলে তাহারা দুনিয়া হইতে খালি হাতে বাহির হইয়া যায়। তাহারা একুল ওকুল উভয়কুল হারায়। দুনিয়াও পায় না, আখেরাতও পায় না। দুনিয়া আখেরাত উভয় জাহানে তাহারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাহাদের প্রভু তাহাদের ভাগ্যে যাহা বরাদ্দ করিয়াছেন উহার শুকরিয়া আদায় করে নাই। ইহার কারণে আল্লাহর বন্দেগীতে অবহেলা করিয়াছে এবং অপরের অংশ যাহা তলব করিয়াছে তাহাও পায় নাই। বরং তাহাদের দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহান ধ্বংস করিয়াছে। তাহারাই হইয়াছে সর্ব নিকৃষ্ট মাখলুক ও সর্বাধিক জাহেল, সর্বাধিক আহমক, জ্ঞান ও দূরদর্শিতা শূন্য।
যদি তাহারা অদৃষ্টের প্রতি সন্তুষ্ট থাকিত, তাহাদিগকে প্রদত্ত নেয়ামতের প্রতি তুষ্ট থাকিত, তাহাদের মাওলার বন্দেগী সুন্দরভাবে করিত তাহা হইলে দুনিয়াতে তাহাদের ভাগ্যে যাহা বরাদ্দ করা হইয়াছে তাহা অবশ্যই তাহাদের নিকট বিনা কষ্টে ও বিনা পরিশ্রমে আসিত। তারপর মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে তাহাদিগকে লইয়া যাওয়া হইত। অতঃপর আল্লাহর নিকট তাহাদের সকল উদ্দেশ্য ও আকাংক্ষা লাভ করিত।
আল্লাহ পাক আমাদিগকে এবং তোমাদিগকে ঐ সকল লোকের দলভুক্ত করুণ যাহারা অদৃষ্টের প্রতি সন্তুষ্ট রহিয়াছে। আর যাহারা অদৃষ্টে সন্তুষ্ট থাকার জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করিয়া থাকে এবং যাহারা আল্লাহর ইচ্ছা ও কাজের মধ্যে নিজকে বিলীন করা এবং তাহাদের অবস্থা রক্ষা করা ও আল্লাহর পছন্দনীয় কাজের তৌফিক লাভ করার জন্যই কেবল মাত্র আল্লাহর নিকট সওয়াল করিয়া থাকে।
👇
ফতুহুল গয়ব🥀
নিরব থাক - হযরত মাওলানা তারিক জামিল হুজুরের চমৎকার বয়ান বাংলা অনুবাদ সহ
👇
