ইসলামিক শিক্ষনীয় গল্প - ইসলামিক অনুপ্রেরণামূলক গল্প
বাস্তব জীবনের শিক্ষনীয় গল্প - শিক্ষামূলক কাহিনী
শিক্ষামূলক গল্প ও ঘটনা - ইসলামিক শিক্ষনীয় গল্প
শিক্ষামূলক গল্পঃ পর্ব - ২
হযরত হাতেম আসাম রহঃ এবং বিচারপতি তানাকেসীর ঘটনা।
প্রথম পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুনঃ
হযরত হাতেম আসাম রহঃ এবং রায়ের কাজীর ঘটনা।
রায়ের জনসাধারণ বিচারপতি মুহাম্মদ এবং হাতেমের এই কথোপকথনের বিষয় জানতে পেরে হাতেমকে বলল যে, বিচারপতি তানাকেসী বিচারপতি মুহাম্মদের চেয়েও বেশী আড়ম্বরপ্রিয়। অতঃপর হাতেম একদা নিজে ইচ্ছা করেই তার কাছে গেলেন এবং বললেন, আমি একজন অনারব ব্যক্তি। আমাকে আপনি ধর্মের প্রাথমিক কাজ এবং নামাযের চাবি অজু শিখিয়ে দিন। তানাকেসী শুনে বলল, সে তো বেশ ভাল কথা। অতঃপর সে গোলামকে পানি আনতে বলল, গোলাম পানি এনে দিলে তানাকেসী অজু করল এবং তিন তিন বার করে অঙ্গগুলো ধৌত করল। তারপর বলল, এভাবে অজু করতে হয়। হাতেম বলল, আপনি দাঁড়িয়ে দেখুন, আমিও একটু পাকা-পোক্ত ভাবে অজু করি। তারপর তিনি অজু করলেন এবং প্রত্যেক অঙ্গ চার চার বার করে ধৌত করলেন। তানাকেসী বলল, মিয়া! আপনি পানির অপচয় করেছেন, আপনি চার চার বার করে অঙ্গ ধৌত করেছেন। তখন হাতেম বললেন, সুবহানাল্লাহ! কি বলেন আপনি, আমি এক অঞ্জুলি পানি বেশী খরচ করেছি, এটা অপচয় হল, আর আপনি এত সব বিলাস দ্রব্য সংগ্রহ করে কি অপচয় করেন নি। তানাকেসী ব্যাপারটা বুঝে ফেলল যে, লোকটির অজু শিক্ষা করার উদ্দেশ্য ছিল না বরং এই
কথাটা বলাই তার উদ্দেশ্য ছিল। সে গৃহাভ্যন্তরে চলে গেল। তারপর চল্লিশ দিন পর্যন্ত আর মানুষের মধ্যে বের হল না।
এরপর হাতেম বাগদাদ চলে গেলে তথাকার লোকেরা বলল, হে আবু আবদুর রহমান! আপনি একজন অনারব লোক, থেমে থেমে কথা বলেন; কিন্তু যে কেউ আপনার সঙ্গে কথা বলে, আপনি তাকে জব্দ করে দেন। ব্যাপার কি বলুনতো! তিনি বললেন, আমার নিকট তিনটি বিষয় আছে। যার দ্বারা আমি প্রতিপক্ষের উপরে জয়যুক্ত হই। প্রথম বিষয় হল, যখন প্রতিপক্ষ হক কথা বলে, তখন আমার আনন্দ লাগে। আর যখন সে নাহক কথা বলে, তখন আমার দুঃখ হয় এবং নিজেকে সংযত রাখি। হাতেমের এ কথা ইমাম আহমদ হাম্বলের কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন যে, হাতেম অত্যন্ত জ্ঞানী ব্যক্তি। তোমরা আমাকে তার কাছে নিয়ে চল। তিনি হাতেমের নিকট গিয়ে তার কাছে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু আবদুর রহমান! নিরাপত্তা কিসের ভিতর? হাতেম বললেন, যে পর্যন্ত আপনার মধ্যে চারটি অভ্যাস সৃষ্টি না হবে, আপনি দুনিয়া থেকে নিরাপদ হবেন না। প্রথম হল, মানুষ অজ্ঞতা প্রদর্শন করলে আপনি তাদেরকে মার্জনা করবেন। দ্বিতীয় হল, নিজের মূর্খতাকে তাদের দিক থেকে ফিরিয়ে রাখবেন। তৃতীয় হল, নিজের বস্তু তাদেরকে দেবেন। চতুর্থ হল, আপনি তাদের দ্রব্য আশা করবেন না। এরূপ হয়ে গেলে আপনি নিরাপদ থাকবেন।
হাতেম মদীনা মুনাওয়্যারায় গেলে তথাকার লোকেরা তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য আগমন করল। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোন মদীনা? জবাব হল, হুযুরে পাক (দঃ) এর মদীনা। তিনি বললেন, হুযুরে পাক (দঃ)-এর বালাখানা কোথায়? আমি তথায় নামায পড়ব। তারা বলল, তাঁর তো কোন বালাখানা ছিল না। সাধারণ গৃহ ছিল। হাতেম বললেন, তবে তাঁর সাহাবাদের প্রাসাদ দেখিয়ে দাও। লোকগণ বলল, তাঁদেরও কোন প্রাসাদ ছিল না। তাদের বাসগৃহগুলো নীচু নীচু ছিল। হাতেম বললেন, তাহলে এটা কি ফিরাউনের নগরী? লোকগণ তাকে আটক করে শাসকের কাছে নিয়ে গেল এবং বলল, এ অনারব লোকটি মদীনাকে ফিরাউনের শহর বলে। শাসনকর্তা বলল, তার কারণ কি? হাতেম বললেন, বিচার তাড়াতাড়ি করবেন না। আমি একজন বিদেশী মুসাফির, শহরে ঢুকে লোকদেরকে জিজ্ঞেস করলাম যে, এ মদীনা কার? তারা বলল, হুযুরে পাক (দঃ)-এর মদীনা। আমি বললাম, তবে তার প্রাসাদ বালাখানা কোথায়? এভাবে সব বৃত্তান্ত বিবৃত করে হাতেম বললেন, আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেছেন,
“লাক্বাদ কানা লাকুম ফী রাসূলিল্লাহি উসওয়াতুন হাসানাহ।”
অর্থাৎ আল্লাহর রাসূল (দঃ)-এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। এখন আমি জিজ্ঞেস করছি, আপনারা কার অনুসরণ করছেন? হুযুরে পাক (দঃ)-এর, না ফিরাউনের? ফিরাউনই সর্বপ্রথম ইট চুনা দিয়ে প্রাসাদ তৈরী করেছে। শাসনকর্তা আর কোন কথা না বলে হাতেমকে মুক্ত করে দিল।
👇
হযরত ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)
এহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন
